মুখ্যমন্ত্রীর রোষে পড়ে শুরু সাফাই

মঙ্গলবার শহরের সাফাই নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর রোষের মুখে পড়তে হয় পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খানকে। রঘুনাথপুর পুরশহরের সাফাইয়ের প্রসঙ্গে আলোচনার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়ার পুরপ্রধানের কাছে জেলা সদর শহরের সাফাইয় পরিষেবা সম্পর্কে জানতে চান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০১
Share:

শহরের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করার পরেই শুক্রবার থেকে সাফাইয়ে জোর দিল পুরুলিয়া পুরসভা।

Advertisement

মঙ্গলবার শহরের সাফাই নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর রোষের মুখে পড়তে হয় পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খানকে। রঘুনাথপুর পুরশহরের সাফাইয়ের প্রসঙ্গে আলোচনার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়ার পুরপ্রধানের কাছে জেলা সদর শহরের সাফাইয় পরিষেবা সম্পর্কে জানতে চান।

পুরপ্রধান জানিয়েছিলেন, শহরের আবর্জনা বাইরে ফেলার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তা শুনেই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকেই শহরের সাফাই ব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ‘‘শহর পরিচ্ছন্ন না রাখলে মানুষ আসবেন কেন’’— এ কথাও বলতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড়ে যাওয়ার রাস্তায় নিকাশি নালা থেকে আবর্জনা তোলার কাজ শুরু করে পুরসভা। রাস্তার পাশে যন্ত্রের সাহায্যে ঢালাইয়ের ঢাকা সরিয়ে তোলা হয় ময়লা। নিকাশি নালার উপরে ঢালাইয়ের ঢাকায় কিছু অস্থায়ী দোকান তৈরি হয়েছিল। সেই সব দোকানও সরিয়ে দেওয়া হয়। কাজের তদারকি করতে দেখা যায়, উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল, কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস ও পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সুদীপ্ত দেবনাথকে।

উপপুরপ্রধান বলেন, ‘‘সাফাইয়ের প্রশ্নে কোনও আপোস করা হবে না।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার পুরসভায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পুরপ্রধান ও দুই কাউন্সিলর সাফাইয়ের কাজ দেখবেন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই শহরে সাফাইয়ের সমস্যা এতটাই পুরনো যে ক্ষোভ জানাতে জানাতে তাঁদের অনেকের এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। নিকাশি নালাগুলিতে জল জমে থাকায় মশা বংশবিস্তার করছে বলে একাধিকবার অভিযোগ তুলেছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরাও। বর্ষায় এই শহরে একটি বিশেষ এলাকায় অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। সে সময়ে শুধু এই শহরেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাই দেড়শো ছাড়িয়েছিল।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, সেই সময় ২১ নম্বর ওয়ার্ডে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়ক লাগোয়া নিকাশি নালায় জমে থাকা জলে তাঁরা মশার লার্ভা গিজগিজ করতে দেখেছিলেন। কিছু দিন আগেও শহরে নতুন করে চার ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলে। তাতে সাফাইয়ের সমস্যা থাকা এই শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিলকা সর্দার, রবি রাজোয়াড়, রাহুলদেব বর্মণদের ক্ষোভ, ‘‘এখনও ঘরের পাশে নিকাশি নালায় জমে রয়েছে নোংরা জল। সেখানে গিজগিজ করছে মশার লার্ভা। দিনের বেলাতেও মশার উৎপাতে ঘরে টেকা দায়।’’ তাঁদের অভিযোগ, নিকাশি নালায় প্লাস্টিক জমে থাকায় জল আটকে যাচ্ছে। কিন্তু, নিয়মিত সাফাই তো দূর অস্ত্‌, দু’-এক দিন ছাড়াও হয় না। মাঝে মধ্যে পুরসভার লোকজন গিয়ে সাফাই করেন।

স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিকাশি নালার জল বয়ে গেলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নিকাশি নালায় যদি জল জমে থাকে, তাহলে নোংরা থিতিয়ে গেলে তুলনামুলক ভাবে পরিষ্কার জলে ডেঙ্গির লার্ভা জন্মাতেই পারে। তাই নিকাশি নালাগুলিতে জল যাতে না জমে, সে জন্য রুটিন করে সাফাইয়ের বিষয়টিতে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

আড়ে বহরে বাড়তে থাকা এই শহরের দৈনন্দিন আবর্জনা ফেলার বিষয়টি পুরসভারও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে পুরএলাকার বাইরে রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলা হত। কিন্তু শহরে জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় সেই সব এলাকায় ঘরবাড়ি উঠতে শুরু করেছে। সেখানকার বাসিন্দারা পুরসভাকে আবর্জনা ফেলতে বাধা দিচ্ছেন। জমির মালিকেরাও আপত্তি জানাচ্ছেন এখন।

এই সমস্যার সমাধানে প্রশাসন কিছুদিন আগে শহরের বাইরে ছড়রা এলাকায় দশ একর জমি পুরসভাকে দিয়েছিল। সেই জমিতেই এতদিন আবর্জনা ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু সেই জমিটি ছড়রা এয়ারপোর্টের আওতায় আসছে বলে সেখানে আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পুরসভার তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে নতুন জমি চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও এই বিষয়ে প্রশাসনকে গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন।

পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এত দিন দুই কাউন্সিলর সাফাইয়ের বিষয়টি দেখতেন। এ বার থেকে আমি দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement