রাজ্য জুড়ে আরও প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় সড়কের লেন সম্প্রসারণ। প্রস্তাবিত খনি প্রকল্পের জমিদাতাদের চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া থেকে পর্যটন প্রকল্পে উন্নয়নের আশ্বাস। রবিবার সিউড়ির চাঁদমারি মাঠে প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তাদের পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি বীরভূমের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন ২১৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন হয় মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। বরাদ্দ ছিল ৭২৩ কোটি টাকা। তালিকায় ছিল বোলপুরে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, তমলুক, আরামবাগ ও বারাসতে পৃথক তিনটি মেডিক্যাল কলেজের। ছিল প্রচুর সংখ্যায় রাস্তা, সেতু, জল প্রকল্প, জলাশায় খনন, ছাত্রী নিবাস ইত্যাদি। পাশাপাশি, এ দিনই ৭২৩টি প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে। বরাদ্দ হয়েছে ৬১০ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা।
৬ লক্ষ ৮০ হাজার ৮৫২ জন উপভোক্তাকে পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। প্রতীকীভাবে কয়েকজনকে মঞ্চেই পরিষেবা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই তালিকায় অগ্রগণ্য ছিল মহম্মদবাজারে প্রস্তাবিত ডেউচা পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্পে জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণের চেক ও চাকরির নিয়োগপত্র বিলি। এ দিন ৫৬৩ জনকে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ওই প্রকল্পে জমিদাতাদের মোট ১৬৮৩ জন নিয়োগপত্র পেলেন।
এ দিন দুপুরে বোলপুর থেকে হেলিকপ্টারে সিউড়ি পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিক ভাবে মুখ্যসচিবের স্বাগত ভাষণের পরই পরিষেবা প্রদান সেরে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা আইএসসি সিবিএই পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেত শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বলেন, ‘‘আমার বক্তব্যের আগে কিছু কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।’’ তার পরেই রাজ্য সরকারের করা একাধিক উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘‘রানিগঞ্জ- মোড়গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ককের খয়রাশোলের ভীমগড় থেকে নলহাটি ২ ব্লকে নাকপুর চেকপোস্ট রাস্তা দুই থেকে চার লেন করার আবেদন পেয়েছিলাম। এলাকার মানুষের কথা ভেবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘৩১ একর জমির উপর ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত হয়েছে। পানাগড়, ইলামবাজার, দুবরাজপুরে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়নের ১০৭ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।’’ পথশ্রী ২ ও ৩ প্রকল্পে কতগুলি গ্রামীণ রাস্তার জন্য কত টাকা ব্যয় হচ্ছে জানান মমতা। সিউড়ি ও সাঁইথিয়া ব্লকে ফ্লোরাইড মুক্ত পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ৫৭ কোটি ব্যয়, লাভপুর ও সিউড়ি ব্লকে বীজ সংরক্ষণ ইউনিট গড়া সহ নানা প্রকল্পের কথা ও তাতে বরাদ্দ অর্থের উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা জানান, রাজ্য জুড়ে ১০০টি ট্যুরিস্ট সার্কিট গড়ে তোলা হচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছে বীরভূমের দু’টি। নাম ‘একতারার সুরে’ ও ‘মাদলের তালে’। কী কী কাজ হয়েছে তার তালিকা দিয়ে মমতার প্রশ্ন, ‘‘এরপরও বলা হয় কাজ হচ্ছে কোথায়!’’ বিরোধীদের বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘বামেরা ৩৪ বছর ছিল ক্ষমতায়। কী করেছে? বিজেপি ১৮ জন সাংসদ জিতিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কী করেছে? ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করেছে।’’
কেন্দ্র সরকার টাকা না দিলেও যে রাজ্য নিজের টাকায় উন্নয়ন করবে সেই দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘পথশ্রী নিজেদের টাকায় করেছি। যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করেছেন কিন্তু মজুরি পাননি তাঁরা নাম লেখাবেন যাতে কেউ বাদ না হন। আমরা ২৬ তারিখ থেকেই টাকা দিতে শুরু করব।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাংলার বাড়ি প্রকল্পে দু’বছর বন্ধ রেখেছে। রাজ্যও ওই প্রকল্পে টাকা দেয়। কেন্দ্র একা টাকা দেয় না। কেন্দ্রের দেওয়া টাকাও রাজ্য থেকে তুলে নিয়ে যায়।’’ কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মঞ্চে ছিলেন রাজ্যে ও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্তারা। ছিলেন ১০ বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ সভাধিপতি, রাজ্যসভা ও লোকসভা মিলিয়ে তিন সাংসদ। মঞ্চে ওঠার আগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের স্টল থেকে ১০টি চামড়ার ব্যাগ কেনেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের উৎসাহ দেন। দেড়টা নাগাদ কপ্টারে কলকাতা রওনা হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী।