ফলন কম, মানও খারাপ ক্ষতির আশঙ্কায় বাদামচাষি

কারও এখনও জমিতেই বাদাম পড়ে রয়েছে, তো কারও বাড়িতে পড়ে রয়েছে বস্তাবন্দি হয়ে। কারণ এ বার বাদামের ঠিকঠাক দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে লাভ দূরের কথা, চাষের খরচ উঠবে কি না তা নিয়েই ভেবেই মাথায় হাত পড়েছে হাওড়ার জয়পুর এলাকার বাদাম চাষিদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৬:৪১
Share:

কারও এখনও জমিতেই বাদাম পড়ে রয়েছে, তো কারও বাড়িতে পড়ে রয়েছে বস্তাবন্দি হয়ে। কারণ এ বার বাদামের ঠিকঠাক দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে লাভ দূরের কথা, চাষের খরচ উঠবে কি না তা নিয়েই ভেবেই মাথায় হাত পড়েছে হাওড়ার জয়পুর এলাকার বাদাম চাষিদের।

Advertisement

বাদামের সঠিক দাম না পাওয়া নিয়ে ব্লক কৃষি দফতরের তরফে বলা হয়েছে এ বার বাদাম উৎপাদন তুলনামূলক কম হয়েছে। বাদামের গুণগত মানও আশানুরূপ হয়নি। সেই কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কৃষি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, মূলত আবহাওয়ার জন্যই এ বার বাদামের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাদাম চাষে ধানের চেয়ে অনেক কম জল লাগলেও পেগিং (বাদাম গাছের ঝুরি যখন মাটির ভিতরে পুঁতে দেওয়া এবং পুঁতে যাওয়ার পর থেকে ফলন আসা পর্যন্ত অবস্থা) এর সময় বৃষ্টি দরকার। যাতে মাটি নরম থাকে। তা ছাড়া বার দুয়েক বৃষ্টি বা জল সেচের প্রয়োজন হয়। সেটা এ বার ঠিকমতো করা যায়নি বলেই মনে করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। ফলে বাদাম কম উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি তার গুণগত মানও তুলনামূলক খারাপ হয়েছে। ব্লকের এক কৃষি কর্তা জানান, জেলা কৃষি দফতরের কাছে রির্পোট পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশের পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

হাওড়ার আমতা ২ ব্লকের জয়পুর, মনুচক-সহ বেশ কিছু এলাকায় বাদামের চাষ হয়। মূলত যে সব জায়গা উঁচু, গ্রীষ্মকালীন ধান চাষের জন্য পর্যাপ্ত জল পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে সেই সব এলাকায় চাষিরা বাদাম চাষ করেন। কারণ ধান চাষে যে পরিমাণ জলের প্রয়োজন, তার এক তৃতীয়াংশের কম জলেই বাদাম চাষ সম্ভব। তা ছাড়া বাদাম চাষ লাভজনকও বটে। কারণ জলের খরচ ছাড়াও সার বা কীটনাশকও এই চাষে কম লাগে। আলু ওঠার পর সেই জমিতেই চাষিরা জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ বাদাম চাষ শুরু করেন। জুন মাস নাগাদ বাদাম ওঠে। এরপর চাষিরা আবার বর্যায় ধান চাষ করেন। সে ক্ষেত্রে এমনও দেখা গিয়েছে, ধান বা আলু চাষে ক্ষতি হলে বাদাম চাষে তা পুষিয়ে নেন চাষিরা।

Advertisement

কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। চাষিরা ধানের ঠিকমতো দাম পাননি। আলু চাষে সে বাবে ক্ষতি না হলেও চাষের খরচ উঠে গিয়েছে। চাষিরা ভেবেছিলেন বাদাম চাষে তাঁরা লাভ করবেন। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তাঁদের সেই আশা কতটা মিটবে তা নিয়ে সন্দিহান জয়পুরের বাদাম চাষিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, অন্যবার যেখানে বাজারে ৪৪-৪৫ টাকা কিলোগ্রাম দরে বাদাম বিক্রি করেন, এ বার সেখানে কিলোপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা দর পাচ্ছেন। একে উৎপাদন কম হয়েছে। তার উপর বাদামের গুণগত মান খারাপের অজুহাতে আড়ৎদাররা কম দাম দিচ্ছে বলে চাষিদের অভিযোগ। যদিও এক আড়ৎদার জানান, আগে যেখানে বাদাম খোলে ৬৫ শতাংশ বাদাম থাকত। এ বার সেখানে ৫০-৫৫ শতাংশ।

মনুচকের বাসিন্দা বিমল দলুই বলেন, ‘‘তিন বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। একদিকে বাদামের দাম পাচ্ছি না। তার উপর ফলনও কম হয়েছে। যেখানে বিঘাপ্রতি ৫ কুইন্টাল বাদাম ফলে, সেখানে এ বার ফলেছে মাত্র ৪ কুইন্টাল। এই অবস্থায় ক্ষতি কী ভাবে সামাল দেব বুঝতে পারছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement