নজরবন্দি: নানুরের বড়া গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। রবিবার। ছবি: কল্যাণ আচার্য
এখানকার মানুষ শেষ ভোট দিতে পেরেছিলেন ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। কেন্দ্রীয় বাহিনী আর পর্যবেক্ষককদের অহরহ টহলে ব্লকের বুথে ভোট হয়েছিল। সেই ভোটে নানুরে হারতে হয়েছিল শাসকদলকে। কিন্তু, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানুরে ভোটই হয়নি। তৃণমূল বলেছিল, বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। বিরোধীদের দাবি ছিল, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা উন্নয়নের’ জন্যই তারা প্রার্থী দিতে পারেনি। লোকসভা ভোটে কী হবে, সে প্রশ্ন ঘুরছিল এখানকার বাসিন্দাদের মনে।
বীরভূমের সেই নানুরে এ বার শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। রবিবার বাহিনীর জওয়ানেরা কুড়চণ্ডী, মোহনপুর, চণ্ডীপুর, মোড়লপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামে টহল দেওয়ার ফলে নানুরের বাসিন্দারা বুকে বল পাচ্ছেন। এ বার নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন ভোটারেরা—এমনই আশা করছেন বিরোধী দলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের একাংশ।
নানুরে নির্বাচন ঘিরে অশান্তির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সেই বাম আমল থেকেই বিরোধীদের ভোটদানে বাধা, ছাপ্পা, রিগিং থেকে শুরু করে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা কিছুই বাদ যায়নি। বোমাগুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। অশান্তির জেরে বহুবার বহু বুথে পুনর্নির্বাচন পর্যন্ত করাতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বীরভূম নিয়ে তপ্ত হয়েচে রাজ্য-রাজনীতি। বিরোধীরা কোনও মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারার অভিযোগ তুলেছিলেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলা পরিষদের ১টি মাত্র আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল বামেরা। ওই একটি আসনে লড়েই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে হেরেছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থীর কাছে প্রায় ২৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারেন তৃণমূলের জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরা। শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই সেই হারের কারণ বলে মনে করা হয়।
অথচ ২০১১ সালে প্রায় ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে গদাধরই ওই আসনে জিতেছিলেন। ২০১৪ সালেও লোকসভা নির্বাচনে নানুরে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের লিড পেয়েছিলেন তৃণমূল। সেই লিড ধরে রাখতে এ বার মরিয়া শাসকদল। সম্প্রতি বুথ কর্মীদের সম্মেলনে প্রায় ৬১ হাজার ভোটের লিড পাওয়ার দাবি করা হয়েছে জেলা তৃণমূলের তরফে। এলাকার বিভিন্ন সভা সমাবেশে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল লিড ধরে রাখতে ‘পাঁচন’, ‘নকুলদানা’ থেকে ‘চোখ বুজিয়ে’ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তা নিয়ে বিতর্কও হচ্ছে বিস্তর। বিরোধীদের অভিযোগ, অনুব্রতের এমন মন্তব্যে ভোটকে কেন্দ্র করে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি সাধারণ মানুষকে সাহস জোগাবে বলেই দাবি বিরোধীদের। জেলা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে গোটা এলাকায় নিয়মিত কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল চলবে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী এর আগেও এসেছে। কিন্তু, নানুরে অনেকেই নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। তাই এ বারও ভোটের দিন না আসা পর্যন্ত কী হবে, বলা মুশকিল।’’
সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার দাবি, ‘‘মানুষ যদি অবাধে ভোট দিতে পারেন, তাহলে ২০১৪ সালের উল্টো ফল হবে বলে আমরা নিশ্চিত।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, ‘‘সিপিএমের সময়েই বরং এখানে কখনও অবাধ ভোট হয়নি। আমাদের সময়ে অবাধ ভোটই হবে। উন্নয়নের নিরিখেই আমরা রেকর্ড ভোট পাব।’’