কী করেছেন সাংসদ, প্রশ্ন দলের নেতারই

সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন— ‘৪২ নম্বর সাংসদ আসনে প্রার্থীদের প্রতি আমার বিনীত আবেদন, মুরারইয়ের নিত্যদিনের সমস্যা নিয়ে নির্বাচনী জনসভায় মুরারইবাসীকে জানান কী করছেন এবং কী করতে চলেছেন?’

Advertisement

তন্ময় দত্ত

মুরারই শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভোটের মুখে উন্নয়নের প্রশ্নে নাম না করে কার্যত দলেরই সাংসদকে বিঁধলেন তৃণমূলের এক নেতা। মুরারইয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থীদের কাছে চেয়েছেন সে সবের জবাব।

Advertisement

২৮ মার্চ তৃণমূলের অঞ্চল কার্যকরী সভাপতি উৎপল গঙ্গ্যোপাধ্যায়ের সেই ‘ফেসবুক পোস্ট’ ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন— ‘৪২ নম্বর সাংসদ আসনে প্রার্থীদের প্রতি আমার বিনীত আবেদন, মুরারইয়ের নিত্যদিনের সমস্যা নিয়ে নির্বাচনী জনসভায় মুরারইবাসীকে জানান কী করছেন এবং কী করতে চলেছেন?’

কী কী সমস্যা ও দাবির কথা তুলেছেন উৎপলবাবু? মুরারইয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল পরিষেবা, রেলগেটের জন্য যানজট ও তার সুরাহা, বাইপাস ও উড়ালপুল নির্মাণ, মুরারইয়ে দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ, মালদা থেকে আসানসোল নতুন ট্রেন পরিষেবা— এ সবের সমাধানে প্রার্থীরা কী ভাবছেন, তা-ই জানানোর আর্জি রেখেছেন তিনি। আরও লিখেছেন— ‘ভোট আসছে আবার চলেও যাচ্ছে। কিন্তু মুরারইয়ের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রচারে বেরিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরকারি পরিষেবা নিয়ে ‘বিক্ষোভের’ মুখ পড়তে হয়েছে শতাব্দী রায়কে। তার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের এক নেতার এমন লেখায় স্পষ্টতই ‘বিব্রত’ বীরভূমের বিদায়ী সাংসদ। মঙ্গলবার শতাব্দী বলেছেন, ‘‘রেলের উড়ালপুলের জন্য অনেক বার সংসদে আবেদন করেছি। সাংসদ তহবিলের অর্থে তা তৈরি করা সম্ভব নয়। বাইপাস নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। জানতে হবে। এই সব বিষয়ে দলে আলোচনা না করে সোশ্যাল সাইটে যাঁরা লিখছেন, তাঁদের আমি দলের লোক বলে মনে করি না।”

শাসক দলের প্রার্থীকে নিশানা করার এমন সুযোগ হাতছাড়া করছে না বিরোধীরা। সিপিএমের বীরভূম জেলা কমিটির সদস্য দুকড়ি রাজবংশী বলেন, ‘‘তৃণমূলের দশ বছরের সাংসদ মুরারই এলাকার উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েও পালন করতে পারেননি। সে জন্য সাধারণ মানুষ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের প্রশ্ন করছেন। জবাব খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়েই তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মনের দুঃখ প্রকাশ করছেন।’’

বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি সুধীররঞ্জন দাস গোস্বামী বলেন, ‘‘ওরা আট বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে।

হঠাৎ ভোটের আগে এ সব লেখার মানে কী বুঝতে পারছি না। তৃণমূল সরকার মুরারইয়ের উন্নতির জন্য কিছুই করেনি।’’

এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, শহরের দীর্ঘদিনের দাবি উড়ালপুল তৈরির। বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে মুরারই স্টেশন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে রেল ফটক। ওই লাইন দিয়ে প্রতি দিন প্রায় ২০ জোড়া মালগাড়ি ও ট্রেন যাতায়াত করে। দীর্ঘক্ষণ রেলগেট পড়ে থাকায় ছড়ায় যানজট। তাঁরা জানান, শহরের দ্বিতীয় সমস্যা হল বাইপাস রাস্তা। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ভাদিশ্বর থেকে রূপরামপুর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হয়নি। জমিমালিকেরা সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়ে গেলেও এখনও সেই জমিতে চাষ করছেন। তৃতীয় সমস্যা ট্রেনের। প্রতি দিন সকাল ৮টায় রামপুরহাট যাওয়ার জন্য একটি লোকাল ট্রেন রয়েছে। তার পরে ১১টায় মেলে আরেকটি ট্রেন। অফিসযাত্রীরা বাসে যেতে বাধ্য হয়। দূরপাল্লার অনেক ট্রেনের স্টপেজও নেই মুরারই স্টেশনে।

উৎপলবাবুর বক্তব্য, ‘‘সাংসদের কাজ শুধু পানীয় জল ও রাস্তার সমস্যার সমাধান করা নয়। মুরারইয়ে যানজট, বাইপাস রাস্তা ও নতুন ট্রেনের জন্য তিনি কিছু করেননি। ওঁর উচিত ছিল মুরারইবাসীর কথা চিন্তা করে এ সব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে কোনও রাজনৈতিক দলই তা পূরণ করতে পারেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement