—ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরে কেটেছে প্রায় দু’মাস। এ রাজ্যে শেষ দফার ভোটগ্রহণ আজ। সকলের নজর এখন ২৩ মে, ভোটগণনার দিকে। আম-জনতা কী রায় দিয়েছেন, তা স্পষ্ট হবে সে দিনই।
বীরভূমের দু’টি লোকসভা আসনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী জিতলেন, জানা যাবে সেটাও। তিন দিন পরে ফলাফল কার অনুকূলে যায়, তা নিয়ে কর্মী-সমর্থকেদের পাশাপাশি চাপা উৎকন্ঠা, উত্তেজনায় ফুটছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে ভোট-ময়দানে থাকা প্রার্থীরাও।
চতুর্থ দফায় ২৯ এপ্রিল ভোট ছিল বীরভূমের দু’টি লোকসভা আসন, বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্রে। নিজের আসনে ভোটপর্ব শেষ করে খানিক জিরিয়ে দলের হয়ে প্রচারে বেরোতে হয়েছিল বীরভূম কেন্দ্রের শাসকদলের প্রার্থী শতাব্দী রায় ও বিজেপির দুধকুমার মণ্ডলকে। কিন্তু
শেষ দফার ভোটপ্রচার শেষ হতেই ফল নিয়ে ভাবনা শুরু করেছেন দু’জনেই। তবে মুখে দুই প্রার্থীই জানাচ্ছেন— জেতার ব্যাপারে তাঁরা ১০০ শতাংশ আশাবাদী।
শেষ দফার ভোটের প্রচারের জন্য মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ছিলেন শতাব্দী রায়। শনিবার কলকাতা ফিরেন। শতাব্দী জানান, ২৩ মে সকাল সকাল তাঁর এলাকার ভোটগণনা কেন্দ্র সিউড়ি সরকারি পলিটেকনিক কলেজে পৌঁছে যাবেন। তার আগের দিন বীরভূমে আসবেন। তারাপীঠে পুজো দেবেন। পর পর দু’বার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন শতাব্দী রায়। এ বার জিতলে ‘হ্যাটট্রিক’ হবে। শতাব্দী আশাবাদী, জয় নিয়ে তিনি নিশ্চিত। ভোটের ব্যবধান কত বড়াতে পারবেন সেটাই তাঁর ভাবনায়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অন্য দিকে তিন দিন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এবং দু’দিন পুরুলিয়া ও হুগলিতে দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীদের প্রচার সেরে জেলায় ফিরেছেন দুধকুমার মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘এ বার মানুষ শাসকদলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। গণতন্ত্রের জয় হবে। তাই জয় নিয়ে চিন্তা করছি না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শাসকদলের থেকে মানুষের সমর্থন কমছে, তা গোটা ভোটপর্বে পরিষ্কার। এত চেষ্টা করেও অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে শাসকদলের অসহযোগিতার জন্যই সেটা হয়নি। এমন নজির কোনও রাজ্যে নেই।’’ বীরভূম লোকসভা আসনে যুযুধান তৃণমূল-বিজেপির দুই প্রার্থী জেতার ব্যাপারে যখন প্রবল আশাবাদী, তখন ‘‘ভোটের ফল নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই’’ বলছেন এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রেজাউল করিম। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে ২২ মে জেলায় ফিরব। তবে ফলপ্রকাশের দিন ভোটগণনা কেন্দ্রে না-ও যেতে পারি। আমি থাকব দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে থেকেই ফল কোন দিকে গড়ায় তা দেখে সিদ্ধান্ত নেব। তবে জেতা হারা বিষয় নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতেই রাজনীতিতে আসা।’’
ভোটের ফল নিয়ে রেজাউল যখন কার্যত অনেকটাই নির্লিপ্ত, তখন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। তিনি বলেন, ‘‘আমিই জিতবো। তবে ফলাফল নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্বেগ নেই। উদ্বেগ বিভাজনের রাজনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটাই দেখেই।’’
শুধু রামচন্দ্রবাবু নন, জেতার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপির রামপ্রসাদ দাসও। ফলপ্রকাশ নিয়ে কোনও উদ্বেগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। রামপ্রসাদবাবুর কথায়, ‘‘জীবনে কোনও বিষয়ে উদ্বেগ আমার নেই। ২৩ তারিখেও থাকবে না। তবে শাসকদল কত ভোট লুঠ করছে সেটা দেখতে হবে।’’ আর বোলপুর কেন্দ্রের শাসকদলের প্রার্থী অসিত মাল বলছেন, ‘‘উদ্বেগ নয়, উত্তেজনা রয়েছে। কারণ মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জন্য ৪২ আসনের ৪২টিই তৃণমূল পাবে। সব থেকে বেশি ব্যবধানে জেতা আসনের তালিকায় থাকবে বোলপুরও।’’
রাজনৈতিক মহলের মত, যেহেতু বাম-কংগ্রেসের জোট হয়নি, রাজ্যের অধিকাংশ আসনে লড়াই মূলত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেই। এ বার ভোট হয়েছে প্রবল মেরুকরণের। তাই ফল বা জয়ের ব্যবধান নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা তত সহজ নয়। বীরভূমে যেহেতু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮৪ শতাংশ আসনে ভোটই হয়নি, তাই পঞ্চায়েত ভোটে সার্বিক ভাবে শামিল হতে না পারার ক্ষোভের আঁচ ঠিক কত বা মেরুকরণের রাজনীতিতে কার সমর্থন কোথায় দাঁড়িয়ে, তার সঠিক হদিশ না পাওয়ায় ধন্দ আছেই।
তার আভাস মিলল বীরভূম লোকসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী ইমাম হোসেনের কথায়। তিনি বলছেন, ‘‘আমিও আশাবাদী, কিন্তু অন্য দলের কেউ জিতলেও শাসকদলের পরাজয়ের সম্ভাবনা প্রবল।’’ অন্যদিকে রেজাউলের মন্তব্য, ‘‘মানুষ এ বার অবাধে ভোট দিয়েছেন এবং সেটা শাসক-বিরোধী ভোট। তবে এমন মনে করার কারণ নেই তার মানে বিজেপি।’’ শাসকদল অবশ্য এ সব বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাদের দাবি, বীরভূমের দু’টি আসনেই জয়ী হবে তৃণমূল।