প্রত্যয়ী: মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন বিজেপির দুই প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র
মনোনয়ন জমা দিয়েই সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলকে নিশানা করলেন দুধকুমার মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল জেলা সভাপতি আইনবিরুদ্ধ কথা বলে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছেন। এমন এক জন মানুষ জেলায় ঘুরতে থাকলে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়। আমি শীঘ্রই ওঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে নালিশ জানাব।’’
সোমবার নির্ধারিত সূচি মেনেই বিজেপির বীরভূম ও বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল ও রামপ্রসাদ দাস মনোনয়নপত্র জমা দেন। শাসক সহ অন্য বিরোধী দল মনোনয়নকে ঘিরে কোনও আড়ম্বর না শোভাযাত্রা না করলেও, ঠিক তার বিপরীত রাস্তায় হেঁটেছে বিজেপি। এ দিন সকাল ১০টা থেকেই সিউড়ির সার্কিট হাউস মোড়ে দলের কর্মকর্তা, কর্মী-সমর্থকেরা হাজির হতে থাকেন। দলীয় পতাকা, ফেস্টুন, গাঁধীটুপি, ব্যাজ, উত্তরীয় ভরে ছিল চারপাশ। দলীয় সূত্রে খবর, কয়েক হাজার সমর্থক তাতে শামিল হন। দুই প্রার্থীর সঙ্গে জেলা বিজেপির নেতারাও ওই শোভাযাত্রায় যোগ দেন।
সার্কিট হাউস থেকে এসপি মোড়, আরটি গার্লস স্কুল, মসজিদ মোড় ঘুরে মিছিল বিবেকানন্দের মূর্তির কাছে থেমে যায়। এর পরে মনোনয়পত্র জমা দিতে প্রশাসন ভবনে ঢোকেন দুই প্রার্থী ও কয়েক জন দলীয় নেতারা। ওই দলে ছিলেন জেলা বিজেপির নেতা রামকৃষ্ণ রায় ও দিলীপ ঘোষ।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন দুধকুমার। অন্য দিকে রামপ্রসাদ মনোনয়ন জমা দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রশান্ত অধিকারীর কাছে।
প্রশাসনিক আধিকারিকদের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই সংবাদমাধ্যমকে বিজেপির দুই প্রার্থী জানান, তাঁরা জয় নিয়ে ১০০ শতাংশ আশবাদী। দুধকুমারের কাছে ররিবারের শিক্ষক সম্মেলনে অনুব্রতের ‘পোলভোট’ মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ‘‘ওঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানাব।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওঁরা সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয় না। গত পঞ্চায়েত ভোট তার প্রমাণ। ওঁরা ভয় পেয়েছে। তাই এ বারেও সন্ত্রাস ছড়াতে চাইছে। তিতিবিরক্ত মানুষ যখন ওই অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছেড়ে আমাদের দিকে ঝুঁকছেন, তখনই এমন সব কথা বলা হচ্ছে।’’
রবিবারই সিউড়ি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলের শিক্ষক সংগঠনের সভায় অনুব্রতের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভোটর দিন ভোটকর্মীদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। প্রলয়কে (প্রলয় নায়েক, তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি) বলবো, যাঁরা যেখানে ডিউটি করছেন সেখানকার ব্লক সভাপতিদের নম্বর দিয়ে দেবে। আপনাদের যদি কোনও ক্ষতি হয়, তা হলে আপনারা আমাকে ধরবেন। কোনও অসুবিধা হবে না। শুধু একটা অনুরোধ করবো, যাঁরা প্রিসাইডিং থাকবেন, তাঁদের বলবো, আমরা ‘পোলভোট’ ৫০০-৬০০ করে নেব। আপনারা যেন সেই সুযোগ দেবেন।’’ অনুব্রতের ‘পোলভোট’কে বিরোধীরা ছাপ্পার তকমা দিয়েছেন। তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন বাম ও বিজেপি নেতৃত্ব। সেই সূত্রে ধরেই বিজেপি প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ও বলছেন, ‘‘আজ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে কলকাতায়। সেখানেও অনুব্রতের ক্রমাগত উস্কানিমূলক কথাবার্তার প্রসঙ্গ উঠবে।’’
যদিও বিষয়টিকে বিশেষ পাত্তা দিতে রাজি নয় তৃণমূল। দলের নেতাদের বক্তব্য, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল পোলভোট বলেছেন। ছাপ্পা কোথাওই উল্লেখ হয়নি।’’ মিছিল করে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়ে জেলা পরিষদ সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘যে কঁটা লোক বিজেপি করে, তাঁরা সকলেই এসেছিলেন।’’