পাড়ুইয়ের গোরাপাড়ায় আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাম প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
মহম্মদবাজারের পরে পাড়ুইয়ের গোরাপা়ড়া। ভোট শেষের পরেও জারি রইল জোটের যৌথ কর্মসূচি।
১৭ এপ্রিল, রবিবার ভোট শেষ হতে না হতেই তেতে ওঠে গোরাপাড়া। তৃণমূল বনাম জোট এবং বিজেপি-র দফায় দফায় বোমাবাজি, গুলি, মার-পাল্টা মারে জখম হন অন্তত ছ’জন। এক জনের কনুইয়ে গুলি লাগে। বাকিরা বোমার আঘাতে এবং মারধরে জখম হন। আহতেরা প্রত্যেকেই সিপিএম ও বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত। বহু বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগও ছিল। হামলার কারণ হিসেবে উঠে আসে তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার অভিযোগ।
ওই ঘটনার পরেপরেই এলাকায় গিয়েছিলেন নেতারা। পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার কয়েক দিনের মধ্যেই ফের গোরাপাড়ায় গেলেন বাম প্রতিনিধি দল। পরামর্শ দিলেন, ১৯ তারিখ, ফল প্রকাশের দিন পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে ধৈর্যের সঙ্গে থাকতে। ‘‘নেতারা আসায় বুকে বল পেয়েছি’’— কবুল করছেন গোরাপাড়ার অনেকেই।
মঙ্গলবার বীরভূম জেলা বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল সকাল ন’টায় গোরাপাড়া পৌঁছয়। ঘণ্টা তিনেক সেখানে ছিলেন। সে দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন শেখ সইফুদ্দিন, আলেনুর মোল্লা, শেখ জাহিরুদ্দিন-সহ অনেকেই। প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে কে, কেমন আছেন জানতে চান। প্রতিনিধি দলকে সামনে পেয়ে ভয় এবং আতঙ্কের কথা জানান বাসিন্দারা। ওই সব কথাবার্তার নোট নেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়। এ দিন প্রতিনিধি দলটি সদাইপুর থানার পিরিজপুর গ্রামেও যায়। ভোট দিতে যাওয়ার পথে ওই এলাকার বাসিন্দা সদানন্দ বাউড়ির পা ভেঙে দেওয়া হয়। মারধর করা হয় স্ত্রীকে। এ দিন তাঁকেও দেখতে যান প্রতিনিধিরা।
সিপিএম নেতা তপন হোড়, রামচন্দ্র ডোমেদের অভিযোগ, “তৃণমূল বুঝতে পারছে পায়ের তলার মাটি সরতে শুরু করেছে। সে কারণেই ওই দিন হামলা চালায়।’’ রামচন্দ্রবাবু বার্তা, ‘‘১৯ মে আর বেশি দেরি নেই। তত দিন সাহস করে, ধৈর্যের সঙ্গে এলাকায় পড়ে থাকুন।” এ দিনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক মনসা হাঁসদা। অন্যদের মধ্যে ছিলেন সাঁইথিয়ার বিদায়ী বিধায়ক তথা জোট প্রার্থী বিজয় বাগদি-সহ ফ্রন্টের শরিক দলের অনেকে নেতাকর্মীরা।
ওই দিনের হামলার পরে এলাকায় অস্থায়ী আধা সেনার শিবির মোতায়েন করেছে জেলা পুলিশ। তারপরেও পুলিশ, প্রশাসনের একাংশের ভূমিকায় খুশি নন বাম প্রতিনিধি দল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা। কিন্তু, কেন হামলা? আক্রান্তদের দাবি, তৃণমূল না করার ‘অপরাধে’ এবং এলাকার বুথে বিরোধী দলের এজেন্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই হামলা।
তৃণমূল অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির সভাপতি মুস্তাক হুসেনের পাল্টা দাবি, শান্ত পাড়ুইকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে সিপিএম। মুস্তাকের অভিযোগ, “সিপিএমই কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আক্রান্ত হয়েছেন বহু কর্মী-সমর্থক। ঘটনার কথা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’ আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানোর নাম করে বামেরাই ফের এলাকায় অশান্তি এবং গণ্ডগোলের আবহ তৈরি করতে চাইছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
তবে ভোটের পরেও সিপিএমের তরফে লাগাতার কর্মসূচি দেখে আশ্বস্ত নিচুতলার কর্মীরা। অনেকেরই মনে হয়েছে, ভোটের পরেও আন্দোলন-প্রতিবাদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইছেন নেতারা। সে কথায় সায় মিলেছে নেতৃত্বের তরফে।