পথে বাস কম, তবে হয়রানি অন্য বারের তুলনায় কমলও

তবে বাঁকুড়ায় যাঁরা কাজে বেরিয়েছিলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে হয়রান হয়েছেন তাঁরা। বাঁকুড়ার জুনবেদিয়া মোড়ে বাসে অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন বেলিয়াতোড়ের বধূ সুদেষ্ণা পাত্র।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

অন্য দিনের মতোই পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড। নিজস্ব চিত্র

শহিদ সমাবেশের মঞ্চে যখন নচিকেতা গাইছেন ‘অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন’, দুই জেলার অনেকেই তখন বাস না পেয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে চলেছেন। তবে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ২১ জুলাই পরিবহণ নিয়ে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কম হয়েছে বলে মত দুই জেলার অনেক বাসিন্দার।

Advertisement

শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি। অধিকাংশ রুটের বাস চলে গিয়েছে কলকাতায়, শহিদ সমাবেশে। এই মওকায় বিভিন্ন এলাকায় অনেকটাই চড়ে গিয়েছিল ছোট গাড়ির ভাড়া। তবে এই দিনটায় বাসের ভরসায় থাকলে যে ভোগান্তি হবে, তা এত দিনে বুঝে গিয়েছেন দুই জেলার অনেক বাসিন্দাই। তাই বিশেষ কাজ না থাকলে সাধারণত বাইরে বেরোননি কেউ। রাস্তাঘাট, বাসস্ট্যান্ড— সর্বত্র ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় কম।

তবে বাঁকুড়ায় যাঁরা কাজে বেরিয়েছিলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে হয়রান হয়েছেন তাঁরা। বাঁকুড়ার জুনবেদিয়া মোড়ে বাসে অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন বেলিয়াতোড়ের বধূ সুদেষ্ণা পাত্র। তিনি বলেন, “অন্তত তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছি। কোনও বাস নেই। অথচ এই সময়টায় ঘন ঘন বাস থাকে।” শেষ পর্যন্ত সহযাত্রীদের পরামর্শে তিনি সতীঘাট বাসস্ট্যান্ডে আসেন ছোট গাড়ির খোঁজে।

Advertisement

বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু অবশ্য জানিয়েছেন, যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে এ দিন প্রায় আটটি অতিরিক্ত বেসরকারি বাস জেলার বিভিন্ন রুটে চালানো হয়েছে। তাঁর কথায়, “বাসের অভাবে কোনও যাত্রী পথে আটকে রয়েছেন এমন অভিযোগ পাইনি।”

আসানসোলে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুরু হওয়া বাস ধর্মঘটের প্রভাব পুরুলিয়াতেও পড়েছিল। শুক্রবার তার দোসর হল কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশে যাওয়ার জন্য জেলা থেকে বাস তুলে নেওয়া। সব মিলিয়ে এ দিন দেখা গেল, জেলার প্রায় অর্ধেক বাস রাস্তা থেকে উধাও। নিট ফল— অপেক্ষা, ভোগান্তি এবং শেষে বেশি ভাড়া দিয়ে ছোট গাড়ি বা অটো চড়ে গন্তব্যে পৌঁছনো। পুরুলিয়ার বাস মালিক সমিতির সভাপতি প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত জানান, জেলায় দৈনিক প্রায় চারশো বাস চলে। তার মধ্যে এ দিন সাকুল্যে ২০০টি পথে নেমেছে। বান্দোয়ান, বোরো, বরাবাজার, মানবাজার, কেন্দা, পুঞ্চা, হুড়া, আড়শা, বাঘমুণ্ডির মতো যে সমস্ত ব্লকে ট্রেন যোগাযোগ নেই, সেখান থেকেই প্রায় ১৭০টি বাস গিয়েছে কলকাতায়। পুরুলিয়া-আসানসোলে রুটে প্রায় তিরিশটি বাস চলে। গত তিন দিন ধরে আসানসোলে বাস ধর্মঘট চলায় ওই বাসগুলি এ দিনও পথে নামেনি।

সুনসান বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়ার তিন মহকুমায় ট্রেন যোগাযোগ থাকলেও মানবাজার মহকুমা এলাকায় ওই এলাকায় সরকারি বাস চলে হাতো গোনা। এ দিন মানবাজার মহকুমা এলাকার বেশিরভাগ বেসরকারি বাস কলকাতায় যাওযায় জেলা সদর বা অন্য এলাকায় বিভিন্ন কাজে যাঁরা যাওয়ার জন্য বেরিয়েছেন, হয়রান হতে হয়েছে তাঁদের। মানবাজারের বাসিন্দা তথা জেলা বাস মালিক সমিতির সদস্য মনোজ মুখোপাধ্যায় জানান, ওই এলাকা থেকে কলকাতা সার্ভিসের প্রায় সমস্ত বাস তৃণমূলের কর্মসূচিতে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সকালে মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা প্রায় সুনসান। ছোট গাড়ি নিয়ে দরদস্তুর চলছে। গাদাগাদি করে যাত্রীরা চড়ছেনও তাতেই। মানবাজার থানার পেদ্দা গ্রামের রমণী সিংহ চার বছরের ছেলেকে নিয়ে বোরো থানার ধান্দা গ্রামে যাওয়ার বেরিয়েছেন। গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার হেটে মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে বসেছিলেন তিনি। রমণী বলেন, ‘‘ধান্দা প্রায় ষোলো কিলোমিটার দূরে। বাস নেই। অটো চারশো টাকা ভাড়া বলছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’’ একই ছবি দেখা গিয়েছে রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডেও। রঘুনাথপুর কলেজের কর্মী আনাড়ার বাসিন্দা সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘসময় আনাড়ায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে বাস না পেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে অটোতে কলেজ এসেছি।”

তবে এ বার অনেকটাই ব্যাতিক্রমী পুরুলিয়া শহর। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের ছবিটা ছিল অন্য দিনের মতোই। কিছু বাস কলকাতায় গেলেও বেশির ভাগ রুটেই বাস চলেছে। বাসস্ট্যান্ডে ফল বিক্রি করেন শেখ মাসুদ। তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য এমনিতেই যাত্রী কম। তবে সবাই তো দেখছি বাস পাচ্ছেন।’’ পুরুলিয়া-বেগুনকোদর রুটের একটি বাসের এজেন্ট টাইগার কুমার আবার বলেছেন, ‘‘বাস তো আছে। যাত্রীই বরং নেই। ৪৫ মিনিটে মাত্র ৯০ টাকার টিকিট বিক্রি হল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement