বেতন বৃদ্ধির দাবি, উৎপাদন বন্ধ কারখানার

শ্রমিক অসন্তোষের জেরে চার দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ সিউড়ির একটি বেসরকারি লোহার রড কারখানার। শ্রমিকদের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী তিন বছর পর পর শ্রমিকদের সঙ্গে কোম্পানির নতুন বেতন চুক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু, কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মতো বেতন না বাড়ানোয় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় শ্রমিকদের মধ্যে। তারই জেরে গত শুক্রবার থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০১:০৬
Share:

কবে খুলবে? চিন্তায় এক ঠিকা শ্রমিক। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

শ্রমিক অসন্তোষের জেরে চার দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ সিউড়ির একটি বেসরকারি লোহার রড কারখানার।

Advertisement

শ্রমিকদের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী তিন বছর পর পর শ্রমিকদের সঙ্গে কোম্পানির নতুন বেতন চুক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু, কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মতো বেতন না বাড়ানোয় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় শ্রমিকদের মধ্যে। তারই জেরে গত শুক্রবার থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। সোমবারও বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে অটল থাকায় কোনও রফাসূত্র মেলেনি। এই পরিস্থিতিতেই মালিককে কারখানার বাইরে বেরতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। বেগতিক অবস্থা দেখে শেষমেশ পুলিশ ডাকতে বাধ্য হন কারখানা কর্তৃপক্ষ। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কারখানার মালিক নিখিল অগ্রবাল বলেন, ‘‘শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গত ৭২ ঘণ্টা ধরে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গোটা বিষয়টি আমি জেলাশাসক এবং জেলার সভাধিপতিকে জানিয়েছি।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে, সিউড়ির অমৃতপুরে অবস্থিত মিনি স্টিল প্ল্যান্ট দীর্ঘ দিন আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওই প্ল্যান্ট লিজ নিয়েই ১৯৯৮ সালে লোহার রড উৎপাদন শুরু করেন নিখিল অগ্রবাল। এ দিন কর্মীরা দাবি করেন, কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর নতুন করে বেতন-চুক্তি হয়। আগের চুক্তি গত ৩১ মার্চ শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পর থেকে কর্মীরা কর্তৃপক্ষকে বেতন বাড়িয়ে চুক্তি নবিকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন। শেষমেশ দিন কয়েক আগে কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। শ্রমিকদের দাবি ছিল, গত বারের চেয়ে আরও ১০০ টাকা করে দিনমজুরি বেশি দিতে হবে।

Advertisement

এ দিন কারখানার শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সম্পাদক রাজু ঘোষাল, আইএনটিইউসি-র সম্পাদক ভরত অঙ্কুর, সিটু সম্পাদক শেখ আমরুলরা বলেন, ‘‘গত শুক্রবারের বৈঠকে শ্রমিকেরা ওই দাবি তুললেও কর্তৃপক্ষ ৩১ টাকার বেশি বাড়াতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তা শুনেই থেকে কর্মীদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাধে।’’ তাঁদের দাবি, অধিকাংশ কর্মীই বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কাজ বন্ধ করে দেন। ফলে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দুই নেতার অভিযোগ, ওই দিনই মালিক নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেন, উৎপাদন বন্ধ থাকা অবস্থায় কাউকে বেতন দেওয়া হবে না। এমনকী, উৎপাদন বন্ধ থাকাকালীন কারখানার লোকসানও শ্রমিকদের উৎপাদন বোনাস থেকে কেটে নেওয়ার কথা বলা হয় ওই নোটিসে। এতে শ্রমিকেরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

সমস্যা মেটাতে গত রবিবার মালিকের কাছে এ দিন বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজুবাবুরা বলেন, ‘‘বৈঠকে বসলেও মালিক সেই ৩১ টাকার বেশি বাড়াতে রাজি হননি। ফলে এ দিনও কোনও সমাধান হয়নি।’’ অভিযোগ, বৈঠক বিফল হওয়ার পরে নিখিলবাবু কারখানা থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করতেই কিছু শ্রমিক তাঁকে বাধা দেন। ওই শ্রমিকদের বক্তব্য, ‘‘উনি কিছু কম-বেশি করে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু, তা না করে নিজের জেদ ধরে রইলেন।’’ শ্রমিকদের দাবিকে সমর্থন জানালেও নিখিলবাবুকে বাইরে বের হতে বাধা দেওয়ার নিন্দা করেছেন শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা।

এ দিকে, নিখিলবাবুর বক্তব্য, কারখানায় ১৪৯, ১৬০ এবং ১৭০ টাকা দিনমজুরি হিসেবে তিনশো মতো শ্রমিক কাজ করেন। তাই প্রত্যেকেরই ১০০ টাকা করে দিনমজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘কর্তৃপক্ষ আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় প্রত্যেকের ৩১ টাকা করে দিনমজুরি বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এ দিনের বৈঠকেও একই কথা জানানো হয়। কারণ এর বেশি আমাদের পক্ষে দিনমজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু, শ্রমিকেরা তা মানতে নারাজ। উল্টে বাইরে বের হতে গেলে আমাকে ওরা বাধাও দেন।’’ সমস্যার সমাধানে এ দিনই তিনি এসপি এবং ডিএম-এর দ্বারস্থ হয়েছেন।

জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, সমস্যা মেটাতে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলার সভাধিপতি তথা আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা শিল্পের পক্ষে। কোনও ভাবেই উৎপাদন বন্ধ রাখা যাবে না। শ্রমিক-মালিক, উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে যাতে সমস্যার সমাধান হয়, তার চেষ্টা করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement