খেজুর গুড় বানানোর কাজ চলছে সাঁইথিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
এই সময়ে জাঁকিয়ে শীত পড়ে যাওয়ার কথা। মাঝে ক’দিন ভাল ঠান্ডা থাকলেও বছরের শেষে ফের তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। তার উপরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। সেই জন্য খেজুর গাছ থেকে আশানুরূপ রস মিলছে না। এর ফলে খেজুরের গুড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত শিউলিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের।
খেজুরের গুড় তৈরিতে যুক্ত কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, খেজুর রসের জন্য আশ্বিন মাস থেকে গাছ কামাতে শুরু করতে হয়। কার্তিক মাসের শেষ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত রস মেলে। সপ্তাহে প্রতিটি গাছ থেকে তিন দিন রস নেওয়া যায়। চার দিন বিরাম দিতে হয়। কারণ ওই দিনগুলিতে রসে শর্করার পরিমাণ খুবই কম থাকে। ওই রসে গুড় তৈরি করা মানে আর্থিক লোকসান ডেকে আনা। গাছ প্রতি তিন দিনে গড়ে মোট ১৮ থেকে ২১ লিটার রস পাওয়া যেতে পারে। ১০ লিটার রসে গুড় মেলে ১ কেজি। জ্বালানি সহ আনুসঙ্গিক খরচ হয় কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা। গুড় কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দাম মেলে। লিটার প্রতি মোটামুটি ২০ টাকা দামে রস বিক্রি হয়।
বীরভূমে খেজুরের গুড় তৈরির সঙ্গে যুক্ত শিউলিদের বড় অংশই নদিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় এক মরসুমের জন্য ১৫ হাজার টাকায় ১৫০টি গাছ নিয়ে খেজুর গুড় তৈরির ব্যবসা করছেন নদিয়ার দেবগ্রামের শামিম সেখ। ওই গ্রামেরই ভোটার শেখ গাছ প্রতি ১ কেজি হারে গুড়ের চুক্তিতে নানুরের ব্রাহ্মণডিহি গ্রাম লাগোয়া পুকুর পাড়ে ২৫০টি গাছ ঠিকায় নিয়ে গুড় তৈরি করছেন। শামিমরা বলেন, ‘‘আমরা বংশ পরম্পরায় গুড় তৈরি করে আসছি। শীতের তারতম্যের উপরে গাছের রস নিঃসরণ নির্ভর করে। জাঁকিয়ে শীত পড়লে বেশি শর্করা যুক্ত রস মেলে। এ বার এখনও সে রকম কড়া ঠান্ডা পড়েনি। কয়েক দিন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার জন্য আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। কী করে ওই ক্ষতি সামাল দেব ভেবে পাচ্ছি না।’’
একই আশঙ্কা নদিয়ার গোবিপুরের বাসেদ আলি শেখ, নাকাশিপাড়ার হরোজ খানদের। বাসেদ কীর্ণাহারে ১৮০টি গাছ ঠিকায় নিয়েছেন। ময়ূরেশ্বরে ২০০ টি গাছ ঠিকায় নিয়েছেন হরোজ। তাঁদের কথায়, ‘‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় আশানুরূপ রস মেলেনা। যেটুকু মেলে তাতেও ঘনত্ব থাকে না। গুড় তৈরি করতে গেলে খরচে পোষায় না। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। এইরকম চললে কী করে নিজেদের পেট চলবে, কী করেই বা গাছ মালিকদের পাওনা মেটাব ভেবে পাচ্ছি না।’’