পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের মাঠে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। নিজস্ব চিত্র।
দুই পড়শিকে আগুন থেকে বাঁচাতে পারলেও নিজেকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া বিহারের নালন্দার বাসিন্দা অমিত রাজ। শুক্রবার পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের এক অনুষ্ঠানে এসে অমিতকে স্মরণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের ছাত্র অমিত রাজ দু’জনকে বাঁচিয়ে দিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে। তাকে এয়ারলিফ্ট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দিল্লিতে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। দশম শ্রেণির একটি ছেলে নিজেকে আহুতি দিয়ে যে বার্তা দিয়ে গেল, তা আমাদের মনে রাখতে হবে।’’
সৈনিক স্কুলের প্রাক্তনীদের সংগঠনের সূত্রে জানা যায়, নালন্দা জেলার রাহুই থানার পেশোয়ার গ্রামের বাসিন্দা অমিতের এক পড়শিরা বাড়িতে গত ৩ ডিসেম্বর আগুন লাগে। দু’জন ছেলে সেই বাড়িতে আটকে গিয়েছিল। অমিত ওই বাড়ির ভিতরে ঢুকে ছেলেগুলিকে উদ্ধার করতে পারলেও তাঁর শরীরের অনেকখানি পুড়ে গিয়েছিল। অমিতকে নালন্দার একটি হাসপাতাল ও পরে পটনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
পরে সৈনিক স্কুলের প্রাক্তনীরা তা জানতে পেরে ৯ ডিসেম্বর ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে অমিতকে পটনা থেকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ১৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। সে দিন পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদেরও অনেকের সঙ্গে প্রাক্তনীরা অমিতের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় রাজ্যপালের কপ্টার সৈনিক স্কুলের মাঠে নামে। তিনি সৈনিক স্কুলের একটি ছাত্রাবাসের উদ্বোধন করেন। পরে দুপুরে পুরুলিয়ার সার্কিট হাউসে রাজ্যপাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আগামী ২০২২ সালে সৈনিক স্কুলের ৬০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এ দিন স্কুল পরিদর্শন করলাম, বৈঠকও করলাম। রাজ্যপালের তহবিল থেকে স্কুলকে ১১ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনমতো এই অর্থ কাজে লাগাবেন।’’
২০২১ সাল দেশ এবং রাজ্যের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, ‘‘এই বছরটা বলবে, দেশের দিশা কোন দিকে থাকবে।’’
নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, সে জন্য সবার কাছে অনুরোধ জানান রাজ্যপাল। পর পর দলবদলের ঘটনায় সরকারকে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে আস্থাভোটের সম্মুখীন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাম-কংগ্রেস। সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে এ দিন রাজ্যপাল বলেন, ‘‘রাজ্যপালের প্রতিটি পদক্ষেপের একটা মর্যাদা রয়েছে। কোনও ভাবেই আমি তার বাইরে যেতে পারি না। আমার কাছে যখন বিষয়টি আসবে, তখন সেটা নিয়ে বিবেচনা করব।’’