মৃত দাঁতালটিকে সরানোর তোড়জোড় চলছে। বুধবার কোদালিয়া গ্রামে অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
আলু খেত থেকে উদ্ধার একটি হাতির দেহ নিয়ে ধন্দ দেখা দিল বেলিয়াতোড়ের কোদালিয়া গ্রামে। বন দফতরের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে টাঙানো বিদ্যুতের বেড়ায় স্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। যদিও গ্রামবাসীদের দাবি, ওই জায়গায় কোনও বিদ্যুতের বেড়া ছিলই না।
বুধবার সকালে বাঁকুড়া উত্তর রেঞ্জের কোদালিয়া গ্রামের একটি আলু খেতে বছর ৩৫-এর হাতিটির দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে বন দফতর দেহ উদ্ধার করে বেলিয়াতোড় রেঞ্জ দফতরে নিয়ে গিয়ে ময়না তদন্ত করায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই দু’টি দাঁতাল কোদালিয়া, ভিকুবানুপুর, কুড়ারডাঙার মতো কয়েকটি গ্রামে ঢুকে পড়ে উৎপাত চালায়। গ্রামের কয়েক বিঘা সব্জি খেত ও কয়েকটি পান বরজের ক্ষতি করে হাতিগুলি। রাত প্রায় ১২টা নাগাদ কোদালিয়া গ্রাম থেকে সেগুলিকে তাড়ান স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ দিন সকালে এলাকার বাসিন্দারা ওই দু’টি হাতির মধ্যে একটিকে আলু খেতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান। খবর পেয়ে ডিএফও (উত্তর) পিনাকী মিত্র ঘটনাস্থলে যান। পিনাকীবাবু বলেন, “অবৈধ ভাবে টাঙানো বিদ্যুতের বেড়ায় স্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব আমরা।” কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা তাপস পাল, নির্মল পালরা অবশ্য বলেন, “রাতে হাতিটির কোনও চিৎকার আমরা শুনতে পাইনি। আশপাশে বিদ্যুতের তারও নেই। জমিতে ছড়ানো কীটনাশক খেয়েও হাতিটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।”
ঘটনা হল, ২০১৬ সালে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগে মোট ন’টি হাতির মৃত্যু হয়। যার মধ্যে সোনামুখী, বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় রেঞ্জে অন্তত পাঁচটি হাতি অবৈধ ভাবে টাঙানো বিদ্যুতের তারের বেড়ার স্পর্শে মারা গিয়েছিল বলে বনদফতরের কর্তারা জানান। সেই সময়ে হাতিগুলির মৃত্যুর পরে এলাকায় গিয়ে জমিতে বিদ্যুতের তার পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বনদফতর বেআইনি বৈদ্যুতিন বেড়ার ব্যাপারটি স্বীকার করেনি। এ বারে তার ব্যতিক্রম দেখা গেল।
বনকর্তাদের দাবি, এ দিন যে এলাকায় হাতিটির মৃত্যু হয়েছে তার কিছুটা দুরেই একটি সাবমার্সিবেল পাম্প রয়েছে জমিতে জল দেওয়ার জন্য। ওই পাম্প থেকেই হুক করে তার টেনে এনে বেড়া দেওয়া হয়েছিল জমিতে। তাতে জড়িয়েই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।
তবে এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে তেমন কোনও তার চোখে পড়েনি। বনকর্তাদের একাংশের দাবি, হতিটির মৃত্যুর পরে রাতারাতি সেই তার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে বেলিয়াতোড় থানায় অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।