বিশ্রাম: সুনসান রাজপথ। পর্যটকের অপেক্ষায় টোটো চালকেরা। বুধবার শান্তিনিকেতনে। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলা ক্যালেন্ডারে আষাঢ়, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই বোলপুর ও শান্তিনিকেতন সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৪০-এর আশপাশে। স্থানীয়দের একাংশের মত, ধীরে ধীরে হয়তো চরমভাবাপন্ন হচ্ছে এই এলাকার আবহাওয়া। প্রখর গরমে এলাকাবাসীর মনে পড়ছে ডিসেম্বরের শীতের কথা। শীতে পারদ নেমেছিল ৭-এ। গরমে ৪০।
গরমের এই দাপটের পিছনে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াকেই দায়ী করছেন শহরবাসীর একাংশ। তাঁদের নালিশ, রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে বা মেরামতির জন্য অনেক গাছ কেটে ফেলা হলেও তার বদলে নতুন গাছ লাগানো হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে— ‘‘বৃষ্টি চাই? গাছ কাটার সময় মনে ছিল না!’’ লেখা হচ্ছে— ‘‘সব কিছুতে ভেজাল মিশলেও গরমটা নির্ভেজাল পড়েছে।’’
প্রখর তাপের জন্য বুধবার থেকেই বাড়তি ছুটি শুরু হয়েছে সরকারি স্কুলগুলিতে। ছুটির মরসুমে পর্যটকের ভিড় জমে শান্তিনিকেতনে। কিন্তু এখন কার্যত সুনসান সেখানকার রাজপথ। হোটেল-লজ প্রায় সবই ফাঁকা। বিক্রি নেই হস্তশিল্প ব্যবসায়ীদের। টোটোচালকেরাও পর্যটকদের আশায় বসে রয়েছেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর নামতেই জনবিরল হচ্ছে শান্তিনিকেতনের রাস্তা। পর্যটক দূরের কথা, বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারাও তাপপ্রবাহ এড়াতে রাস্তায় বের হচ্ছেন না। গত শনি ও রবিবার খোয়াইয়ের হাটেও পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম ছিল বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
তাপপ্রবাহের কারণে একদিকে যেমন এক দল ব্যবসায়ীর বাজার খারাপ। অন্য দিকে বিক্রি বেড়েছে আঁখের রস, ডাব, গোলা, আইসক্রিমের। রাস্তায় যাঁরা বেরচ্ছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই সে সব কিনে গরমের দাপট রুখছেন। ঠান্ডা জলের বোতলের বিক্রিও বেড়েছে। শহরে বেড়েছে টেবিল ফ্যানের বিক্রি। এলাকাবাসীর অনেকর বক্তব্য, ছাদ থেকে সিলিং ফ্যান গরম বেশি টানছে। ভরসা তাই টেবিল ফ্যানই।
শুধু শান্তিনিকেতন নয়, দাবদাহ থেকে রেহাই পায়নি বোলপুরও। একতলা ঘরগুলির ছাদ, দেওয়াল, মেঝে গরম থাকছে সারাদিন। বহুতলের উপরের তলায় টেকা দায়। গরম থেকে বাঁচতে রাতে ছাদেই মশারি টাঙিয়ে ঘুমোচ্ছেন অনেকে। স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শোভন দেবংশী জানান, এমন গরম এর আগে শেষ কবে পড়েছিল মনে করতে পারছেন না।
দাবদাহের থেকে কিছুটা হলেও রেহাই মিলছে গ্রামে। বট, পাকুড়ের মতো গাছের ছায়ায় অনেকটা স্বস্তিতে গ্রামবাসী। খড়ের চালের বাড়িতেও গরম অনেক কম। তবে তাঁদের চিন্তা চাষ আর সেচের জল নিয়ে। গ্রামবাসী শেখ রহিমের কথায়, ‘‘গরম আরও কিছু দিন থাকলে চাষের ক্ষতি হবে।’’