দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার মধ্যেই বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বীরভূমে। সম্প্রতি উদ্যানপালন দফতরের বিরুদ্ধে ওঠা সেই অভিযোগকে ঘিরে প্রশাসনে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্তও।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় বেশ কিছু পুকুর খননের দায়িত্বে বা পিআইএ (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টিং এজেন্সি) হিসেবে ছিল উদ্যানপালন দফতর। অভিযোগ, টাকা খরচ হলেও পুকুরগুলির অধিকাংশই ঠিক ভাবে কাটানো হয়নি। যে সংখ্যক কর্মদিবস বা টাকা বরাদ্দ ছিল, সেই পরিমাণ কাজই হয়নি। এই অভিযোগ সামনে আসার পর জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, এনআরইজিএ সেলের আধিকারিকেরা বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেছেন, ‘‘ওই কাজের পিআইএ ছিল উদ্যানপালন দফতর। মোটের উপরে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে কাজ ঠিকমতো হয়নি। পুরো বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে যে ছবি উঠে আসবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’ সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য খোলাখুলিই বলছেন, ‘‘জেলার অন্যান্য পঞ্চায়েত এলাকা রয়েছে। তবে পুকুর খননের কাজ বেশি হয়েছে সাঁইথিয়া ও সিউড়ি ২ ব্লক এলাকায়। বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়ে দেখেছি, মোটেও কাজ হয়নি। অথচ টাকা উঠে গিয়েছে। আমার মনে হয় পঞ্চায়েত কর্মী থেকে উদ্যানপালন দফতরের কর্মী— বিরাট একটা চক্র কাজ করছে বলেই এমনটা ঘটেছে। তদন্ত শেষ হলেই সেটা বোঝা যাবে।’’
এমজিএনআরইজিএ সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্বে থাকে। তবে কর্মদিবসের সংখ্যা ও সম্পদ সৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়াতে এমজিএনআরইজিএ এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টিং এজেন্সির সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কয়েক বছর। সেই সূত্র ধরেই সেচ, বন, উদ্যানপালনের মতো সরকারি দফতর ১০০ দিনের বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে পিআইএ হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের নিয়ে তৈরি সঙ্ঘ সমবায়ও।
জেলা এমজিএনআর সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪৩টি কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উদ্যানপালন দফতরকে। সেই কর্মসূচির মধ্যে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় পুকুর খননের কাজও ছিল। চলতি অর্থবর্ষে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের চিঠি দিয়ে উদ্যানপালন দফতর ‘ই- মাস্টার রোল’ তৈরি করতে বলে। কাজ করেছেন সেই সব পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাসকারী জবকার্ড হোল্ডাররা। কিন্তু কাজ শেষ হতে না হতেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার শুভঙ্কর ভট্টাচার্য জানিয়েছন, মোট ২৭টি পুকুর কাটা হয়েছে। ২৬টি পুকুর খননের টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজে বেশ কিছু অসঙ্গতি নজরে এসেছে। প্রতিটি কাজ ধরে তদন্ত হচ্ছে।
যে দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই উদ্যানপালন দফতরের উপ-অধিকর্তা সজলেন্দু শীট বলেন, ‘‘এখন তদন্ত চলছে, নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তের ফল না জানা পর্যন্ত আমি কিছুই বলতে পারব না।’’
তবে এর দায় নিতে নারাজ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানেরা। তাঁদের বক্তব্য, এলাকার জবকার্ডধারীরা কাজ করেছেন ঠিকই। তবে পঞ্চায়েত বা কর্মীদের কোনও ভূমিকা নেই। বৃহস্পতিবার দমদমা পঞ্চায়েত এলাকায় উদ্যানপালন দফতরের উদ্যোগে কাটা চারটি পুকুর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। দমদমার প্রধান এহেসানউল হকের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত না কাজ দেখভাল করেছে, না মাটি কাটার হিসাব করেছে বা টাকা দিয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে ই-মাস্টার রোল তৈরি করা ছাড়া কিছুই করেনি। তার পরেও কেন পঞ্চায়েত দায়ী হবে?’’