ভারী যানে ‘লাইফ’ গিয়েছে বাইপাসের, ক্ষুব্ধ দুবরাজপুর

শহরের ব্যস্ততম এবং গুরুত্বপূর্ণ পাকা রাস্তা। গালভরা নাম ‘বাইপাস’। অথচ বহু বছর আগেই সেই রাস্তার পিচ উঠে এমন হাল যে গ্রামের মেঠো পথকেও হার মানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫০
Share:

ধুলোময়। এমনই অবস্থা দুবরাজপুর-সাতকেন্দুরী রাস্তার। —দয়াল সেনগুপ্ত

শহরের ব্যস্ততম এবং গুরুত্বপূর্ণ পাকা রাস্তা। গালভরা নাম ‘বাইপাস’। অথচ বহু বছর আগেই সেই রাস্তার পিচ উঠে এমন হাল যে গ্রামের মেঠো পথকেও হার মানায়।

Advertisement

দুবরাজপুর পুর এলাকার ওই রাস্তার উপর দিয়েই ভারী যানবাহনের যাতায়াতে উড়তে থাকা ধুলো নাভিশ্বাস তুলেছে নাগরিকদের। পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কাজ না হওয়ায় সম্প্রতি এলাকার মহিলারা পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। পরিস্থিতির চাপে ঘটনাস্থলে ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন খোদ পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে এবং বিধায়ক নরেশ বাউড়িকে। তাঁরা সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেওয়ায় অবরোধ সাময়িক হলেও দ্রুত পরিস্থিতি না বদলালে আরও বড় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়ে রেখেছে ওই প্রমীলা বাহিনী। কবে, বেহাল রাস্তার হাল ফেরে তার অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকার মানুষ। যদিও সুষ্ঠু সমাধান কবে হবে, তার সদুত্তর মিলছে না।

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুবরাজপুর সাতকেন্দুরী থেকে আশ্রমমোড় পর্যন্ত রাস্তাটির দৈর্ঘ প্রায় তিন কিলোমিটার। রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও দুবরাজপুর বক্রেশ্বর রোড সংযোগকারী এই রাস্তাটি শহরের অন্যতম ‘লাইফলাইন’ও বটে। ফলে প্রচুর ভারী যানবাহন ওই রাস্তায় যাতায়াত করে। পুরসভা ওই রাস্তার উপরে যাতায়াতকারী যানগুলি থেকে টোলও আদায় করে। কিন্তু অভিযোগ, টোল নিলেও রাস্তা সারানোর ক্ষেত্রে পুরসভার কোনও ভূমিকাই নেই।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, বহুকাল আগে বাম আমলে রাস্তাটি পাকা হয়েছিল। কিন্তু, ২০০৭ সাল থেকেই রাস্তাটি করুণ হাল হয়ে যায়। তখন অন্ডাল-সাঁইথিয়া রেলপথ ডবল লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলছিল। সেই সময় পাথরবোঝাই লরি যাতায়াতে রাস্তাটি একেবারেই ভেঙে যায়। পুরসভা জোড়াতালি দিয়ে পরে সারালেও সেটা কখনই সঠিক মানে পৌঁছয়নি বলে এলাকাবাসীর দাবি। বর্তমান পুরসভার দাবি, এত টাকা পুরসভার হাতে নেই যে রাস্তাটি সঠিক ভাবে সংস্কার করা যায়।

ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বাসিন্দা বলছেন, ‘‘বর্ষায় বড় বড় গর্তে জল জমে, জলকাদার সমস্যা। আর বর্ষা পেরোলেই কাদা শুকিয়ে ধুলো। সমস্যা আরও বেড়েছে পুরসভা কিছু ইট এনে সেই গর্তে ফেলায়।’’ ভারী লরির চাপে সেগুলি গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। সেই লাল ধুলো উড়ছে চার দিকে। গোটা রাস্তারই একই হাল। তবে, ধুলোর সমস্যা সব চেয়ে বেশি সিনেমাহলের আগে থেকে আশ্রমমোড় পর্যন্ত। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ১ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে যাওয়া রাস্তার দু’পাশে বাড়িঘরের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। ধুলোর জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে ক’দিন আগে তাঁরাই পথে নেমেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা দুর্গা মণ্ডল, সরস্বতী বাউড়ি, ছবি পাল, রুমা চন্দ্র, জ্যোৎস্না ঘোষদের ক্ষোভ, ‘‘সারা দিন এত গাড়ি যায় যে ধুলোয় নিঃশ্বাস নেওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। শিশুরা রয়েছে। এলাকায় অ্যালার্জি, হাঁপানি রোগীরা রয়েছেন। সকলেরই খুব কষ্ট। প্রশাসন এর কোনও প্রতিকার করছে না।’’

দুবরাজপুরের পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘রাস্তাটি খারাপ হয়ে গিয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমাদের মতো ছোট পুরসভার পক্ষে এত টাকা খরচ করে তা পুননির্মাণ করা সম্ভব নয়। জেলা পরিষদ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় রাস্তাটি বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’’

যত দিন না সেটা হচ্ছে, দু’বেলা রাস্তায় জল ছিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পীষূষবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement