নার্সিং-স্কুল ঘুপচি ঘরে, শুরু তদন্ত

জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘লালপুরে একটি ভুয়ো নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে এই কেন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’’

Advertisement

প্রশান্ত পাল

হুড়া শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০৭:০০
Share:

কেন্দ্র: এই বাড়িতেই চলত প্রশিক্ষণ। নিজস্ব চিত্র

টিনের ছাউনির নিচে দেড় খানা ঘর। তার ভিতরে কিছু মেয়ে ‘ক্লাস’ করছে। বাইরে গাছতলায় অপেক্ষায় পরের ‘ব্যাচ’। এ ভাবেই এক বছরের বেশি সময় ধরে হুড়ার লালপুর মোড় থেকে কিছুটা দূরে চলছিল নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু ভর্তি হতে আসা কয়েকজন তরুণীর সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসন তদন্তে গিয়ে ওই নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভুয়ো বলে তালা মেরে দিলেন। ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হল আসানসোলের তিন বোনকে।

Advertisement

জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘লালপুরে একটি ভুয়ো নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে এই কেন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’’ ধৃত মামণি বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্পী বন্দ্যোপাধ্যায় ও চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি আসানসোল দক্ষিণ থানার শ্রীপল্লিতে। বৃহস্পতিবার তাঁদের পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ভুয়ো শোনার পরে তাজ্জব এলাকার অনেকেই। ধানখেতের পাশে একটি পাকা ঘর। বাইরে কোনও বোর্ড নেই। কিন্তু বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই একটি মাত্র ঘরেই দিব্যি চলত ক্লাস। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা থাকত। প্রশিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম ছিল না। বাড়ির মালিক জয়দেব মণ্ডল বলেন, ‘‘একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাবে বলে আমার কাছে ঘরটি তাঁরা ভাড়ায় নিয়েছিলেন। ক্লাস চলতে দেখেছি। তবে তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি ছিল কি না তা জানি না।’’ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এত দিন ধরে এই ভুয়ো কেন্দ্র চললেও, তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কারও নজরে পড়ল না কেন?

Advertisement

অথচ ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অল্প দূরেই মাগুড়িয়া-লালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। পঞ্চায়েত প্রধান সুরজমণি মুর্মু বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রটি চালানোর জন্য সংস্থাটি পঞ্চায়েতকে আগাম কিছুই জানায়নি। এখানে কী প্রশিক্ষণ হতো, তাও আমরা জানতাম না। বুধবার কয়েকজন তরুণী এসে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ করেন। তখন পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানানো হয়।’’

বুধবারই ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শনে যান বিডিও (হুড়া) শুভায়ু কাশ্যপি ও থানার ওসি রামগোপাল পাল। বিডিও বলেন, ‘‘ওই তরুণীদের অভিযোগ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সংস্থাটির বিজ্ঞাপন দেখে তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে ৩১০০ টাকা ভর্তির জন্য চাওয়া হয়। জানানো হয়েছিল, শিক্ষার্থী জোগাড় করতে পারলে তাঁদের কমিশন দেওয়া হবে। এতেই সন্দেহ তৈরি হয় ওই তরুণীদের। তখন তাঁরা ঘটনাটি পঞ্চায়েত প্রধানকে জানান।’’ তিনি জানান, ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য ওই তিন বোন তাঁদের কোনও বৈধ অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি।

পুলিশ জানাচ্ছে, ওই কেন্দ্র থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিন বোনের মধ্যে এক জন নিজেকে তামিলনাড়ুর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি পাওয়া স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেছেন। সেই ডিগ্রি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘুপচি ঘরে কী ভাবে নার্সিং প্রশিক্ষণ চলত, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিডিও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণ চালানোর মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো ওখানে ছিল না।’’

হুড়া থানার বাইরে ছিলেন ধৃতদের বাবা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান। তাঁর দাবি, ‘‘এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালানোর জন্য আমার কাছে রাজ্য সরকারের বৈধ অনুমতি রয়েছে। সেই অনুমতি অনুযায়ী এই বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমরা চালাতেই পারি।’’ কিন্তু বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে কি নার্সিং প্রশিক্ষণ চালানো যায়? আসানসোলের শ্রীপল্লির বাসিন্দা স্বপনবাবু দাবি করেছেন, ‘‘অন্যত্রও এ ভাবেই চলছে।’’

যদিও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলছেন, ‘‘ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কেউই নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালাতে পারেন না। এই ধরনের কেন্দ্র চালানোর জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামো রয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখে নার্সিং কাউন্সিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement