দাবদাহে ব্যাহত বোরো ধানের ফলন

সেচ দফতর আগেই জানিয়ে দিয়েছিল এবার বোরো চাষে এক ফোঁটা জল মিলবে না সেচ খাল থেকে। কৃষি দফতর সতর্ক করেছিল যাঁরা বোরো চাষ করবেন নিশ্চিত সেচের ব্যবস্থা থাকলে, তবেই করবেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

জলের অভাবে শুকোচ্ছে ধান। ফাইল চিত্র।

সেচ দফতর আগেই জানিয়ে দিয়েছিল এবার বোরো চাষে এক ফোঁটা জল মিলবে না সেচ খাল থেকে। কৃষি দফতর সতর্ক করেছিল যাঁরা বোরো চাষ করবেন নিশ্চিত সেচের ব্যবস্থা থাকলে, তবেই করবেন! কিন্তু সাবমার্সিবলের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের ভরসায় যাঁরা ধান লাগিয়েছিলেন দুবারজপুরের লোবা ও পদুমা অঞ্চলের একটা বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের চাষিদের মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল লো-ভোল্টেজের সমস্যায়।

Advertisement

বেশ কিছুদিন হা পিত্যেশের পর বিদ্যুৎ দফতরের তৎপরতায় সমস্যা কিছুটা কেটেছে। বর্তমানে সেচ দিতে পারছেন চাষিরা। কিন্তু পুরোপুরি কাটেনি। তার কারণ, প্রখর গ্রীষ্মে ধানের একটা বড়সড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।

নিশ্চিত সেচের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও এবার জেলা জুড়ে খরার ধানের ফলন মার খাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি দফতরও। কারণ একটাই তীব্র দাবদাহ। জেলা সহ কৃষি অধিকার্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল বলছেন, ক্ষতি ঠিক কতোটা হতে পারে এক্ষুণি বলতে পারছি না। ব্লক ওয়াড়ি হিসাব নিকাশ চলছে। এই সময়টাই ধানের শীষ মুকুল হয়। এখনও পর্যন্ত একটাও কালবৈশাখী হয়নি। বৃষ্টিপাত নেই। ঠিকমতো সেচ দিতে না পারলে প্রখর তাপে শীষ মুকুল ক্ষতিগ্রস্থ হলে ফলন মার খাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত খরিফ মরসুমে ৩ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। তার মধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান বন্যায় নষ্ট হয়ে যায়। বেশিরভাগ বছরেই এই ধরনের ক্ষতি পূরণ করতে জোর দেওয়া হয় বোরো চাষে। কিন্তু এবারে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছিল। কারণ গত বর্ষায় শেষ বেলায় বৃষ্টি কৃপণ হয়ে যাওয়ায় ফসল বাঁচাতে জালাধার, পকুর, ডোবা, নালা থেকে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে রবি চাষের আগেই জেলার জলভাণ্ডার টান পড়েছিল।

পরিস্থিতি জটিল হয় যখন সেচ দফতর বোরো চাষে জল দিতে পারব না ঘোষণা করে তখন। অমরবাবু জানিয়েছেন, ‘‘সেচখাল, সাবমার্সিবল পাম্প-সহ ক্ষুদ্র সেচের মধ্যমে জেলায় প্রায় ৭৫ থেকে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোচাষ হয়। তার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির চাষ পুরোপুরি সেচখাল নির্ভর। সেচখালের জল না পাওয়ায় এবার প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু সেই চাষের কতটা সফল ভাবে করা গেল দিন কয়েকের মধ্যেই সেটা বোঝা যাবে।’’ জেলা কৃষি দফতরের দফতরের আশঙ্কা যে মিথ্যে নয় সেটা এই কদিনে অনুভব করেছেন লোবা ও পদুমা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা।

ঝিরুলের রণবীর চৌধুরী, আমুড়িগ্রামের শেখ মোহর, শিমূলডিহির শেখ আশরাফ, তরুলিয়া, খণ্ডগ্রামের মহম্মদ রফিক, পদুমার উত্তম ঘোষেরা জানাচ্ছেন, এবার স্যালো, সাবমার্সিবলের ভরসায় কেউ ১৫ বিঘা কেউ ১০ বিঘা জমিতে খরার ধান লাগিয়ে ছিলাম। কিন্তু গত ১৫দিন ধরে টানা লো-ভোল্টেজের জন্য মেশিন চালাতে পারিনি। ফলে ধান প্রায় মরতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত দিন দুই আগে অন্য একটি সাবস্টশনের সঙ্গে এলাকার সাবমার্সিবল গুলি যুক্ত করায় ধানে জল দেওয়া যাচ্ছে। কিছু ধান বাঁচবে ঠিকই তবে ফলন মার খাবে।

বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের দুবরাজপুর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার(টেকনিক্যাল) সঞ্জয় হালদার বলছেন, ‘‘একসঙ্গে এত বিদ্যুতের চাহিদার জন্য দুবরাজপুর সাব স্টেশন থেকে বিদ্যুত দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তরুলিয়া মোড়ে জয়দেব সাবস্টেশন নামে ৩৩ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন আরও একটি স্টেশন তৈরি হচ্ছে। তার একটি ট্রান্সফ্রমারের সঙ্গে কিছু সাবমার্সিবল যুক্ত করায় লো ভোল্টেজের সমস্যা কিছু হলেও মিটেছে। সাবস্টেশনের কাজ শেষ হলে চাষিদের আরও সুরাহা হবে।’’

দুবারজপুরের চাষিরা শেষ পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু অধিকাংশ জলাশয় প্রখর তাপে শুকিয়ে যাওয়ায় অনেক অংশেই সচের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভয়ের কারণ সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement