মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের অবাধ ব্যবহারে কমছে বহু উপকারি কীটপতঙ্গও

গ্রামেও কমছে মৌমাছির চাক

বাপ-ঠাকুরদার হাত ধরে মধু সংগ্রহ শুরু করেছিলেন লাভপুরের কাপসুন্দি গ্রামের বছর চল্লিশের রিয়াজুল শেখ।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০১
Share:

জীবিকা: লাভপুরের কাপসুন্দি গ্রামে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত যুবক। রবিবার। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

হরেক কীটনাশকের ব্যবহারে মৌমাছির বংশবৃদ্ধি কমছে। হারাচ্ছে মৌমাছির চাক। এক সময় গ্রামগঞ্জে গাছ, বাড়ির কার্নিস থেকে মৌমাছির চাক ভেঙে মধু সংগ্রহ করে বছরের বেশ কয়েক’টা মাস জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে। বর্তমানে অবলুপ্তির পথে এসে দাঁড়িয়েছে ওই পেশাটি।

Advertisement

বাপ-ঠাকুরদার হাত ধরে মধু সংগ্রহ শুরু করেছিলেন লাভপুরের কাপসুন্দি গ্রামের বছর চল্লিশের রিয়াজুল শেখ। তিনি জানান, তখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে গৃহস্থের বাগান কিংবা বাড়ি থেকে মজুরি অথবা ভাগের বিনিময়ে যা মধু মিলত, তাতেই ৭/৮ মাস সংসার চলে যেত। এখন সেই চাক আর নেই। থাকলেও চাকে আগের মতো মধু নেই। এখন মধু সংগ্রহ করে মাসখানেকও সংসার চলে না।

ওই গ্রামের মেহেরুল শেখ, হাসিরুদ্দিন শেখরা জানান, বছর কুড়ি আগেও গ্রামে প্রায় ৩০টি পরিবার মধু সংগ্রহের পেশায় ছিল। এখন মাত্র চারটি পরিবার কোনও রকমে ওই পেশায় টিকে রয়েছে। একই অবস্থা ময়ূরেশ্বরের দুনা গ্রামের মধুবালাদেরও। এক সময় ওই গ্রামেও ২০/২৫টি পরিবার মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন ৩/৪টি পরিবার মধু সংগ্রহের কাজ করেন। দানিশ শেখ, আসরাফ আলি, ইরফান মল্লিকরা বলেন, ‘‘সদ্যোজাতের মুখে মিষ্টি কথা ফোটানোর জন্য কত জন আমাদের কাছে মধুর বায়না দিয়ে রাখতেন। এখন আমাদেরই জীবন তিক্ত হয়ে গিয়েছে। চাক তো কালেভদ্রে দেখা যায়। সে সব চাকের আয়তনও খুব কম। আগে একটি চাক থেকে ৭/৮ কেজি মধু মিলত। এখন মাত্র ২/৩ কেজি মধু মেলে। গৃহস্থকে অর্ধেক ভাগ দিয়ে খাটনিই পোষায় না।’’

Advertisement

এঁদের কথায়, ‘‘এখন মাসে ৪/৫টির বেশি মৌচাক পাওয়া যায় না। কেজি প্রতি ৮০/১০০ টাকা দরে মধু আর ৫০/৬০ টাকা দরে মোম বিক্রি করে আর পেটের ভাতের জোগাড় হয় না।’’

প্রাণীতত্ত্ববিদদের মতে, চাষিরা গতানুগতিক চাষে অভ্যস্থ হয়ে পড়ায় তিল, সরষে, তিসির মতো মধুযুক্ত ফুল সমৃদ্ধ চাষ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। মধুর সন্ধানে মৌমাছিরা তাই বনে গিয়ে মৌচাক তৈরি করছে। পাশাপাশি অত্যাধিক রাসায়নিক এবং কীটনাশক ব্যবহারের জন্য ফুলে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌমাছিও মারা পড়ছে। ফলে পরাগমিলনের অভাব জনিত কারণে মধুযুক্ত বহু ফুলের গাছও গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে ওই সব মধুবালাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম মৌমাছি পালনে জোর দেওয়া দরকার।

জেলা উদ্যান পালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সজলেন্দু সিটের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা সহকারি কৃষি (তথ্য) অধিকর্তা অমর মণ্ডল জানান, জেলায় কৃত্রিম মৌমাছি পালন প্রকল্প আছে কিনা জানা নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে শুধু মৌমাছি নয়, বহু উপকারি কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধি লোপ পাচ্ছে, এ কথা সত্যি। এ জন্য আমরা জৈব সার এবং কীটনাশক ব্যবহারে চাষিদের উৎসাহিত করছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement