ধুলোয় ঢেকেছে চারপাশ। ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।
মহম্মদবাজারের অন্যতম পিকনিক স্পট হিংলোর দ্বারবাসিনী মন্দির এলাকা। নদী লাগোয়া মন্দির ও সাতশো বছরের শাল বন দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। পৌষ সংক্রান্তির দিন প্রায় লক্ষ মানুষের ভিড় হয়। কিন্তু দ্বারবাসিনী যাওয়ার রাস্তার অবস্থা ভীষণ খারাপ। পঞ্চায়েত সমিতি বা প্রশাসনের উচিৎ রাস্তা সংস্কার ও দ্বারবাসিনীকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা। তাতে আর্থিক দিক দিয়েও এলাকার লোকজন উপকৃত হয়। একই সঙ্গে ব্লকের নিকাশি নিয়েও ভাবা উচিত।
পূর্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সারেন্ডা
সভাপতি: রাস্তা সারানো হবে। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে ভাল হয়। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলব। সর্বত্রই নিকাশি ব্যবস্থা আছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের দেউচা মোড় থেকে গ্রামের ভিতরে যাওয়ার রাস্তাটি মাস ছয়েক আগেই ঢালাইয়ের রাস্তা করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই ওই রাস্তার সর্বত্র পাথর বেড়িয়ে গেছে। এলাকার লোকজনের দাবি, নিম্ন মানের সিমেন্ট বা মশলা দিয়ে কাজ করায় রাস্তার এই হাল।
বিশাখা কর্মকার, দেউচা
সভাপতি: ওই রাস্তার উপর দিয়ে অজস্র পাথরের ট্রাক যায়। এবং গত কয়েকদশক থেকেই ওই রাস্তার হাল বেহাল ছিল। বর্তমান জেলা পরিষদ ক্ষমতায় আসার পরে রাস্তাটি যাতে বার বার নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্য কংক্রীটের করার সিদ্ধান্ত নেয় ও করে। কেন নষ্ট হয়েছে ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ টিউবওয়েল খারাপ। ফলে জলকষ্ট এলাকাবাসীর নিত্যসঙ্গী। গরমে তা চরম আকার ধারণ করে।
মিনারুদ্দিন দপ্তরী, রাউতড়া
সভাপতি: ওই এলাকায় জলকষ্ট সাময়িক। প্রচুর কল আছে। বিকল কলগুলি সারিয়ে দেওয়া হবে।
ভাঁড়কাটা এলাকাজুড়ে পানীয় জল ও রাস্তা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। পাথর শিল্পাঞ্চল হওয়ায় মাত্রা তিরিক্ত দূষণ এলাকার লোকজনকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ সব সমস্যা সমাধানে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেবে?
আসপিয়া বিবি, ভাঁড়কাটা
সভাপতি: ভাঁড়কাটা ও হিংলো সহ পাথর শিল্পাঞ্চল, দীঘলগ্রাম ও সীমান্তবর্তী চড়িচা অঞ্চলেও জলের সমস্যা আছে। এক কথায় কম বেশি জল সমস্যা ব্লকের প্রায় সর্বত্র। ইতিমধ্যে পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকায় চারটে সাবমার্শিবল বসানো হয়েছে। দেউচা, মহম্মদবাজার ও পুরাতনগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নতুন জল প্রকল্পের কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করা হবে। সার্বিক জল সমস্যা দূর করা নিয়েও প্রশাসনের সর্বস্তরে চিন্তাভাবনা চলছে।
গুটিকয় লোকের জন্য রাস্তা খারাপ হচ্ছে। রাস্তার ব্যাপারে এলাকাবাসীকেও সচেতন হতে হবে। যে কোনও শিল্পের ক্ষেত্রেই কমবেশি দূষণ হয়। পাথর শিল্পে হয়ত দূষণের মাত্রা একটু বেশি। কিন্তু জীবন জীবিকার স্বার্থেই শিল্প। তবে আগের চেয়ে দূষণের পরিমাণ অনেক কম। অধিকাংশ পাথরকলে জল দেওয়া ও ঘেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিল্পকে বাঁচিয়ে যতটা সম্ভব দূষণ কমানোর ব্যাপারে প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট।
দীঘলগ্রামেও রাস্তার হাল খারাপ। গরমের সময় তীব্র জলকষ্ট দেখা দেয়। প্রশাসন কি ব্যবস্থা নিচ্ছে?
লিলি খাতুন, দীঘলগ্রাম
সভাপতি: সর্বত্রই রাস্তা ও জল নিয়ে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। আগের সমিতির উদ্যোগের অভাবেই এই সব সমস্যা বেড়েছিল। ইতিমধ্যে ব্লকের যে সমস্ত রাস্তা খারাপ আছে তা সারানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জল সমস্যা দূর করারও চেষ্টা চলছে।
মহম্মদবাজার ব্লকে কোনও কলেজ নেই। এলাকার ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে কি কলেজ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে?
নূর হোসেন, দীঘলগ্রাম
সভাপতি: ভাল প্রস্তাব। সত্যিই এলাকায় একটা ভাল কলেজের খুব প্রয়োজন। বেশ কয়েক বছর আগে কাঁইজুলিতে কলেজ করার ব্যাপারে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। ইতিমধ্যে কলেজের ব্যাপারে আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রেখেছি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণানুযায়ী ব্লকে কারিগরি শিক্ষা বা আইটিআই কলেজ গড়ার কাজও শুরু হয়ে গেছে।
আঙ্গারগড়িয়া অঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় ট্যাপকল পৌঁছায়নি। আবার বেশ কিছু কলে জল পড়ে না।
রুমা আঁকুড়ি, আঙ্গারগড়িয়া
সভাপতি: টাইমকলের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পিএইচইকে বলা হবে। কোনও কারণে কল খারাপ হয়ে থাকলে তা সারানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে এলাকার লোকজন কল খারাপের ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে জানালে ভাল হয়।
ভুতুড়া অঞ্চলের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পশ্চিম দিকে অবস্থিত গ্রামগুলিতে কোনওরকম স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা ও অ্যামবুল্যান্সও নেই। এলাকার মানুষের কথা ভেবে খয়ড়াকুড়ি নিতাই গৌড় গিরিধারী আশ্রমে গত চার বছর ধরে দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সমিতি ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসক, ওষুধ ও একটি অ্যামবুল্যান্সের ব্যবস্থা করে, তাহলে এলাকার উপকার হয়।
রঘুনাথ দাস, খয়ড়াকুড়ি
সভাপতি: বিবেচনা করা হবে।
মহম্মদবাজার এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে প্রায় দিন দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া এলাকার খড়িমাটি ও পাথর শিল্পাঞ্চলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ব্লক হিসাবেও বড়। অধিকাংশ লোকজন গরীব। অথচ এই ব্লকে উন্নতমানের কোনও হাসপাতাল নেই। এলাকার জাতীয় সড়কের ধারে কোথাও একটা আধুনিক হাসপাতাল হলে ভাল হয়।
প্রদীপ মণ্ডল, মহম্মদবাজার
সভাপতি: অনেকদিন আগে জাতীয় সড়কের ধারে বড় হাসপাতাল গড়ার কথা শুনেছিলাম। তারপর সব চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। আমরাও চাই ব্লকে অত্যাধুনিক হাসপাতাল গড়ে উঠুক। এবং এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সমিতির পক্ষ থেকে প্রস্তাব রাখা হবে।
বিধানচন্দ্র রায় পটেলনগর টাউনশিপ গড়তে চেয়েছিলেন। ৫০ দশকের শেষের দিকে সেই মতো মাস্টার প্ল্যান বানিয়ে সরকারি খরচে প্রচুর ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়। ঠিকমতো দেখভালের অভাবে অধিকাংশ ঘরবাড়ির এখন ভগ্নদশা। আর নামেই টাউনশিপ। এখনও বাস্তব রূপ পায়নি। যদি টাউনশিপ বাস্তবায়িত করা যায় তাহলে এলাকার আর্থ সামাজিক চেহারা বদলে যাবে।
অসীম দে সরকার, পটেলনগর
সভাপতি: সাধু প্রস্তাব। তৃণমূল সবে পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় এসেছে। আপনার এই প্রস্তাব জেলা পরিষদ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সর্বস্তরে জানানো হবে। এবং সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে যদি সত্যিই বড় আকারের পটেলনগর টাউনশিপ গড়ে ওঠে তাহলে এলাকার সর্বস্তরের লোকজন উপকৃত হবেন। সেক্ষেত্রে আমাদের তরফ থেকে চেষ্টার কোনও ত্রুটি হবে না।