ভয়ে: সোনামুখীর পাথরা থেকে ইছারিয়া গ্রামের পথে। ছবি: শুভ্র মিত্র।
এক দিনের ব্যবধানে বড়জোড়ায় হাতির হানায় পরপর দু’টি মানুষের মৃত্যুর পরে দাঁতালদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়াল বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগ।
বন দফতরের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতেই বড়জোড়ার সাহারজোড়া জঙ্গল থেকে ২৫টি হাতি মূল দলের সঙ্গ ছেড়ে বেলিয়াতোড়ের দিকে রওনা দেয়। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যেই হাতিগুলি বেলিয়াতোড় ছেড়ে সোনামুখী রেঞ্জ এলাকার জঙ্গলে প্রবেশ করে। তার মধ্যে ১৭টি হাতি রাতে বিষ্ণুপুর-সোনামুখী সড়ক পার হয়ে মানিকবাজার বিটে প্রবেশ করেছে। স্থানীয়দের মাইকে সতর্ক করছে বন দফতর। ৫০ জন হুলা কর্মী হাতিগুলির গতিবিধির উপরে নজর রাখছে। নজরদারি চালাচ্ছে সোনামুখী, পাত্রসায়র ও রাধানগর রেঞ্জের আধিকারিকেরাও।
ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) উমর ইমাম বলেন, “৬২টি হাতি বড়জোড়ার জঙ্গলে ছিল। তাদের মধ্যে ২৫টি হাতি বেলিয়াতোড়, সোনামুখী হয়ে ফিরতি পথ ধরেছে। বাকি হাতিগুলি বড়জোড়ার সাহারজোড়ার জঙ্গলে থাকলেও শীঘ্রই ফেরার পথ ধরবে বলে আমরা আশাবাদী।’’ তিনি জানান, হাতিদের গতিবিধির জন্য জনজীবনে যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বন দফতরের আশা, হাতিগুলি বিষ্ণুপুর পাঞ্চেৎ ডিভিশন হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পথ ধরতে পারে।
চলতি সপ্তাহেই বড়জোড়ার সাহারজোড়া ও ঘুটগোড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকায় হাতির হানায় দু’জনের মৃত্যুর পরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে। অস্বস্তিতে রয়েছে শাসকদলও। এলাকা থেকে হাতিগুলিকে তাড়ানোর জোর দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
তবে হাতিগুলি ফিরতি পথ ধরায় সোনামুখী, পাত্রসায়র ও বিষ্ণুপুর পাঞ্চেৎ ডিভিশনের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামাঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করা জঙ্গললাগোয়া পড়ুয়াদের নিয়ে বিশেষ চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকেরা।
জঙ্গলঘেঁষা সোনামুখীর সুখসায়র গ্রামের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া শৈলেন মান্ডি, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রিয়া মান্ডি ইছারিয়া গ্রামের স্কুলে পড়ে। তারা বলে, “একে জঙ্গলপথ, তার উপরে আবার স্কুলে যাওয়ার রাস্তার হাল খারাপ। হাতির হামলার ভয় নিয়েই স্কুলে যাই। এখন হাতির পাল এসে পড়ায় আরও বেশি করে আমরা ভয়ে রয়েছি।’’ পাথরা গ্রামের বাসিন্দা ধনঞ্জয় মন্ডল বলেন, “ছেলে মাধ্যমিক দেবে। চার কিলোমিটার জঙ্গলপথ পার হয়ে ওকে স্কুলে যেতে হয়। আমাদের দাবি, মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই হাতিগুলি যাতে এলাকা ছাড়ে তা নিশ্চিত করা হোক।”
ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) বলেন, “হাতিগুলি ফেরার পথ ধরে শীঘ্রই জেলা ছাড়বে। গ্রামে গ্রামে হুলাপার্টি রাখা হচ্ছে যে কোনও ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য।”