সাঁটানো হয়েছিল পোস্টারও।—নিজস্ব চিত্র।
পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের গেরোয় পড়ে স্থগিত রাখতে হল পুরুলিয়ার সৃজন উৎসব। আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে মানবাজার ২ ব্লকের খড়িদুয়ারা ডুংরিতে শুরু হওয়ার কথা ছিল তিন দিন ব্যাপী এই সৃজন উৎসবের। কিন্তু, টাকা বাতিলের জেরেই তা আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে উৎসব কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে।
কংসাবতী ও কুমারী নদীর সঙ্গমস্থলে খড়িদুয়ারা ডুংরির মাথায় এই উৎসব এ বার বাইশ বছরে পড়ল। দেশজ সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার ও উজ্জীবন— এই লক্ষ্য সামনে রেখেই উৎসব কমিটি প্রকৃতির কোলে টানা একুশ বছর ধরে এই উৎসব করে আসছে। সৃজন উৎসবের স্লোগান, শিল্পের মেশামেশি জীবনের মহাসঙ্গম। উৎসব কমিটির সম্পাদক সৈকত রক্ষিত জানান, তিন দিনের এই উৎসবে এলাকায় মেলাও বসে। স্থানীয় মানুষ সেই মেলায় নানা জিনিসপত্রের দোকান দেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই উৎসব শুধু এক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নয়, স্থানীয় অর্থনীতির বিষয়টিও জড়িত থাকে। তাঁরা দোকান দেন, অনেক জিনিসপত্রের কেনাবেচা হয়। এলাকার মানুষের কিছু রোজগার হয়।’’
কিন্তু উৎসব বাতিল করতে হল কেন?
সৈকতবাবু এবং মেলা কমিটির অন্যতম কর্তা গৌতম দত্ত জানান, গাড়ি ভাড়া করে প্রচুর মানুষ এই উৎসবে সামিল হতে আসেন। ভিন রাজ্য থেকে অনেক শিল্পী ও গুণগ্রাহীরাও আসেন। তাঁরা বলেন, ‘‘৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম অসুবিধায় পড়েছেন। আমরা হয়তো এই অবস্থার মধ্যেও কোনও ভাবে উৎসবের আয়োজন করতে পারব। কিন্তু নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় মেলায় আসা মানুষজন সমস্যায় পড়বেন। তাঁরা গোটা বছর এই উৎসবের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাঁরা যাতে না সমস্যায় না পড়েন, সে জন্যই উৎসব বাতিল করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’ সৈকতবাবু জানান, এই প্রথমবার এমন অবস্থার মধ্যে পড়ে উৎসব বাতিল করতে হল। এই কারণে উৎসব কমিটিকেও অনেক টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। কেননা বাইরের সমস্ত শিল্পীর ট্রেনের টিকিট, বিভিন্ন অতিথি আবাস বুকিং, খাবারদাবারের বন্দোবস্ত, গাড়ি বুকিং—প্রায় সব বন্দোবস্তই হয়ে গিয়েছিল। এখন হঠাৎ সব বাতিল করতে হচ্ছে। ‘‘এখনও উৎসবের সমস্ত শিল্পীকে খবরই পাঠানো যায়নি।’’— চিন্তার সুরে বলছেন সৈকতবাবু।
স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ মাহাতোর কথায়, ‘‘প্রথম বছর উৎসবের প্রথম দিনে আকাশ কালো করে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছিল। উদ্যোক্তারা উৎসব মানবাজারে স্থানান্তরিত করেন। কিন্তু এই একুশ বছরে উৎসব কখনও বাতিল হয়নি। এ বারই প্রথম হল।’’
এই উৎসবকে এলাকার মানুষজন বাংলায় ভারতমেলা বলেই জানেন। কেননা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির ছোঁয়া থাকে উৎসবে। পুরুলিয়ার ছৌ-ঝুমুরের পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন জেলার বাউল, ভাওয়াইয়া, লোকগান, তুক্কা, লেপচা নৃত্যও থাকে। বিভিন্ন প্রদেশের বিহু, ভাংড়া, কুচিপুরি, ওডিশি নাচও থাকে। এক মাস পিছিয়ে এই উৎসব ডিসেম্বরের ১০-১২ তারিখ হবে বলেই প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে বলে সৈকতবাবু জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ণিমা ধরেই এই উৎসব হয়। এ বারই প্রথম ব্যতিক্রম হল। পূর্ণিমা ধরে ডিসেম্বরেও করা যেত। কিন্তু সে সময় বিয়েবাড়ির মরসুম থাকায় সমস্যা হবে।’’