শাহনাজ খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।
হাইমাদ্রাসার রাজ্যওয়াড়ি ফল বলছে, প্রথম দশের আট জনই মেয়ে। আর বীরভূমে? প্রথম ও দ্বিতীয়— দু’জনেই মেয়ে।
শুক্রবার প্রকাশিত হয় হাইমাদ্রাসার ফল। সেখানেই নজরকাড়া সাফল্য মেয়েদের। প্রথম দশে মেয়েদের জায়গা পাওয়া ‘সর্বকালীন রেকর্ড’ বলে জানাচ্ছেন মাদ্রাসা পর্ষদের কর্তারা। কেবল প্রথম দশেই নয়, গত বারের নিরিখে ছাত্রীদের পাশের হারও বেড়েছে। ২০১৫ সালে ছাত্রীদের পাশের হার ছিল ৭৪.৬৬ শতাংশ। চলতি বছরে ছাত্রীদের পাশের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫.০৪ শতাংশে।
বীরভূমে পাশের হার আরও ভাল। তৃণমূল প্রভাবিত হাইমাদ্রাসা শিক্ষা সেলের বীরভূম জেলা সভাপতি ফজলে মওলা খান বলেন, ‘‘জেলায় এ বছর ৩৩৫৭ জন হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় বসেছিল। পাশের হার প্রায় ৮০ শতাংশ।’’ মাদ্রাসা বোর্ডের জেলা সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, গতবার পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ৮টি। এ বার ৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
জেলায় এ বার সম্ভাব্য প্রথম নলহাটি থানার আমাইপুর মিলনী মাদ্রাসার শাহনাজ খাতুন। প্রাপ্ত নম্বর ৬৯০। দ্বিতীয় স্থানে আছে নানুর থানার পাপুরি হাইমাদ্রাসার মহসিনা খাতুন। প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯। ছেলেদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম আমাইপুর মিলনী মাদ্রাসার আবুল হাসনাত। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭১।
নলহাটি থানার মধুরা গ্রামের কৃষিজীবী পরিবারের শাহনাজের ইচ্ছে অঙ্কের শিক্ষক হওয়া। সামান্য কিছু চাষের জমি রয়েছে শাহনাজের বাবা নজরুল ইসলামের। নজরুল বলছেন, ‘‘তা থেকে যা আয় হয় তাতেই কোনও রকমে সংসার চলে।’’ এমন অবস্থায় মেয়েকে আর পড়াবেন কী করে তা ভেবে ঘুম উবেছে তাঁর। জানালেন, তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। মেজো মেয়ে শাহনাজ আরও পড়তে চায়! শাহনাজের মা রেহানা বিবিও চান মেয়ে আরও পড়ুক। শাহনাজ আমাইপুর উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়।
শাহনাজের ফলে উচ্ছ্বসিত আমাইপুর মিলনী মাদ্রাসা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘মাদ্রাসায় ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফলের সুনাম আছে। সেই সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে নিয়মিত ক্লাস করা হয়।’’ শাহানাজের প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ৭৭, ইংরেজি ৮৭, অঙ্ক ৭৬, ভৌতবিঞ্জান ৯৮, জীবনবিঞ্জান ৯৬, ইতিহাস ৭৯, ভূগোল ৮৭, ইসলাম পরিচয় ৯০, আরবি ৮১।
জেলায় সম্ভাব্য দ্বিতীয় পাপুড়ি গ্রামের মহসিনা খাতুন। প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৯। শুধু মহসিনা নয়, ভাল ফল করেছে জিন্নাতুন্নেসা, মনিরা খাতুনরাও। রাজ্যের মধ্যে প্রথম একশোর নাম রয়েছে শাহানাজ, মহসিনার। মেধা তালিকার ৭৫ এ নাম রয়েছে শাহানাজের, আর মহসিনার ৭৭। প্রথম দশে মেয়েরা সাফল্য পেলেও সার্বিক ভাবে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের সাফল্যের হার বেশি। চলতি বছরে মোট ১৩, ৬৭৩ জন ছাত্র পরীক্ষা দিয়েছিল। উত্তীর্ণের সংখ্যা ১১, ৪৮৬। পাশের হার ৮২.২৫ শতাংশ। এ বার ৩১, ৭৫৩ জন ছাত্রীদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৩, ৭৪৯ জন।