গড়া হল ২০ জনের কমিটি

লোকপাড়ায় শুরু হবে বালিকা বিদ্যালয়

প্রাথমিক স্কুল থেকে কলেজ। এলাকার মানুষ অর্থ, জমি এবং স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে গড়েছেন আরও অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। এ বার ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়তেও উদ্যোগী হলেন এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষজন। গত শনিবার সেই লক্ষে স্থানীয় হাইস্কুলে এক সমাবেশে মিলিত হলেন তাঁরা। ওই সমাবেশ থেকেই বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য শুরু হয়ে গেল প্রয়োজনীয় জমি এবং অর্থ সংগ্রহের কাজও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০২:২০
Share:

প্রাথমিক স্কুল থেকে কলেজ। এলাকার মানুষ অর্থ, জমি এবং স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে গড়েছেন আরও অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। এ বার ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়তেও উদ্যোগী হলেন এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষজন। গত শনিবার সেই লক্ষে স্থানীয় হাইস্কুলে এক সমাবেশে মিলিত হলেন তাঁরা। ওই সমাবেশ থেকেই বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য শুরু হয়ে গেল প্রয়োজনীয় জমি এবং অর্থ সংগ্রহের কাজও। লোকপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দে বলেন, ‘‘বালিকা বিদ্যালয়ের বাড়ি না হওয়া পর্যন্ত কলেজের মতোই সকালে আমাদের স্কুলবাড়ি ব্যবহারের ব্যবস্থা করব।’’

Advertisement

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৬৭ সালে এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। সেই স্কুলটিই ধাপে ধাপে মিডল ভার্নাকুলার, মধ্য ইংরেজি থেকে জুনিয়র হাইস্কুলে পরিণত হয়। ১৯৫৫ স্বতন্ত্র জায়গায় মাধ্যমিক এবং ১৯৭৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল গড়ে ওঠে। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে এলাকার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের নিয়ে একটি কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেন লোকপাড়া হাইস্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত নবকিশোর হাজরা। ২০১০ সালে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে সেই কলেজ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থ এবং জমি দিয়ে ওই সব প্রতিষ্ঠান গড়তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু অর্থ এবং জমিই নয়, প্রথম দিকে ওই সব প্রতিষ্ঠানে বিনা কিংবা ন্যূনতম বেতনে কার্যত স্বেচ্ছাশ্রমে পড়িয়েছেন বহু বেকার যুবক এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা। পাশাপাশি এলাকার মানুষেরই সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে গ্রন্থাগার, পঞ্চায়েত অফিস, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দু’টি খেলার মাঠ-সহ নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠান।

এ বার দাবি উঠল বালিকা বিদ্যালয়ের। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, এলাকার স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের চাপ বাড়ছে। বাড়ছে ছাত্রীদের স্কুল যাওয়ার প্রবণতাও। লোকপাড়া হাইস্কুলেই প্রায় ২০০০ পড়ুয়ার মধ্যে ৫০ শতাংশই ছাত্রী। অন্যান্য স্কুলেও একই অবস্থা। স্থানাভাব কিংবা দূরত্বের কারণে তাই ছাত্রীরা পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কারণ, ব্লকের একমাত্র বালিকা বিদ্যালয় বলতে রয়েছে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ময়ূরেশ্বরে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এই পরিস্থিতেতে লোকপাড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হলে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটবে। প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই এলাকায় শিক্ষা সহযোগী পরিবেশ গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রাথমিক, জুনিয়র এবং মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে লোকপাড়া হাইস্কুলে ভিড় জমাচ্ছেন অভিভাবকেরা। ওই স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্থানাভাবের কারণে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি নিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি একটা বালিকা বিদ্যালয়ই ওই সমস্যার সমাধান করতে পারে।শুধু এলাকার স্কুলই নয়, লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলার এক বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের ছাত্রীরা উপকৃত হবে। কারণ, দুই জেলার কেন্দ্রস্থল হিসেবে লোকপাড়ার ভূমিকা গুরুত্বপুর্ণ। শনিবার তাই সমাবেশের ডাক দিয়েছেলেন এলাকার শিক্ষানুরাগীরা।’’ সেখানে হাজির ছিলেন স্কুল এবং কলেজ স্থাপনের উদ্যোক্তা, স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদানকারী, জমিদাতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডল, স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রলয় মণ্ডল, বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রতিনিধি, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষানুরাগী মানুষজন। সেখানে ২০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঠিক হয় লোকপাড়া বালিকা বিদ্যালয় নামে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষে ওই দিন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন তাঁরা।

Advertisement

এক সময় কলেজের জন্য গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা এবং ৭ একর জমি সংগ্রহ করেছিলেন সুভাষ ঘোষ, ফটিক দে, আহাদ শেখ, দীনেশ দে, আনন্দ দাস, বংশী মণ্ডল, সুরেন্দ্রনাথ পালরা। তাঁরা বলেন, ‘‘বালিকা বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে এ বার আমরা ভিক্ষা করেই জমি এবং টাকা সংগ্রহ করব।’’ স্বেচ্ছাশ্রমে কলেজে পাঠ দিয়েছেন শিবপ্রসাদ ঘোষ, জগদীশ রায়, শিবসাধন ঘোষ, কাশীনাথ দাসরা। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রয়োজনে স্থায়ী শিক্ষক না পাওয়া পর্যন্ত আমরাও ফের স্বেচ্ছায় পাঠদান করব।’’ প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক তথা লোকপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক সৌগত চৌধুরী মন্তব্য, ‘‘এত মানুষের এত সদিচ্ছা বিফলে যাবে না। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতোই বালিকা বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও সরকার সদয় হবে। বালিকা বিদ্যালয়টি সরকারি অনুমোদন পেলে শিক্ষা বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষা দফতরের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীরও দৃষ্টি আর্কষণ করব।’’ এই উদ্যোগের কথা শুনে আপ্লুত শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উদ্যোক্তাদের শিক্ষানুরাগকে মর্যাদা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement