সন্ত্রাস রুখে ভোটই প্রাপ্তি, বলছে বিজেপি

দিনের শেষে স্বস্তির শ্বাস ফেলে অনুব্রতের অনুগামীরা তাই বলছেন, ‘‘রাজ্যে যাই হোক, বীরভূমে কেষ্টদার ম্যাজিক কাজ করল আরও একবার!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৫:৪৮
Share:

হিসেব: বোলপুরে চলছে ভোটগণনার কাজ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

গোটা রাজ্যে দলের ফল খারাপ হয়েছে। নিজের জেলায় তার আঁচ পড়তে দিলেন না বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বিজেপি-র এই রকেট-সম উত্থানের বাজারেও নিজের গড় অটুট রাখতে পেরেছেন। জেলার দু’টি আসনই দলকে জিতিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত।

Advertisement

দিনের শেষে স্বস্তির শ্বাস ফেলে অনুব্রতের অনুগামীরা তাই বলছেন, ‘‘রাজ্যে যাই হোক, বীরভূমে কেষ্টদার ম্যাজিক কাজ করল আরও একবার!’’ সেই ম্যাজিকে ভর করেই বীরভূম কেন্দ্রে জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন শতাব্দী রায়। আবার বোলপুর থেকে জিতে প্রথম বারের জন্য সাংসদ হতে চলেছেন অসিত মাল।

ম্যাজিক কাজ করল বটে, কিন্তু অনুব্রতকে বৃহস্পতিবার দিনভর তাঁর চেনা মেজাজে পাওয়া যায়নি। বরং কিঞ্চিৎ গোমড়াই দেখিয়েছে। এর কারণ হিসাবে বীরভূমের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এই ভোটের ফল তৃণমূল কর্মীদের প্রিয় ‘কেষ্টদার’ জন্য চিন্তার ভরপুর বার্তা বয়ে এসেছে। তাদের বক্তব্য, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেল। কারণ, হারলেও বাম-কংগ্রেসকে টপকে প্রবল ভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল তাই বলছেন, ‘‘হারাটা বড় কথা নয়, তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মানুষ ভোট দিয়েছেন এটাই আসল।’’ তাঁর দাবি, পঞ্চায়েতে মানুষকে ভোটই দিতে দেয়নি তৃণমূল। এ বার তাঁরা ভোট দিতে পেরেছেন। আর সেই ভোটেই দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে তাঁদের দল। ফলে, নৈতিক জয় তাঁদেরই হয়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের কথায়, ‘‘একটুর জন্য বীরভূম কেন্দ্রে হেরেছি বটে। কিন্তু যে ভাবে মানুষ বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটা বিশাল প্রাপ্তি।’’

Advertisement

বোলপুরে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ২ লক্ষ ৩৬ হাজারের কিছু বেশি। এ বার তা অনেকটাই কমেছে। বীরভূম কেন্দ্রে শতাব্দীর জয়ের ব্যবধান অবশ্য কিছুটা বেড়েছে। তবে জয় পেলেও শাসকদলকে যেটা সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রেখেছে, তা হল, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, সিউড়ি, রামপুরহাট শহর এবং বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির থেকে পিছিয়ে যাওয়া। একই ঘটনা ঘটেছে বোলপুর লোকসভা আসনে। সেখানেও বেশ কয়েকটি বিধানসভায় এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। দলের এক শীর্ষ নেতার দাবি, ‘‘ফল বের হওয়ার দেখা যাচ্ছে ৬টি বিধানসভা এলাকায় আমরা লিড পেয়েছি। যা পরিস্থিতি, এখনই বিধানসভা ভোট হলে বীরভূমের অধিকাংশ আসনে জয়ী হব আমরা।’’

এই নির্বাচনের ফলে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট। সেটা হল, গোটা দেশের মতো, বীরভূমেও কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে বাম এবং কংগ্রেস। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বীরভূম কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস মিলিত ভোট ছিল পাঁচ লক্ষেরও বেশি। সেই ভোটে বিশাল ধস নামিয়েছে গেরুয়া শিবির। একই ছবি বোলপুরে। সেখানেও পাঁচ বছর আগে বাম-কংগ্রেস পাঁচ লক্ষের বেশি ভোট পেয়েছি। সেটার বড় অংশই পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। তবে রাজনীতির কারবারিদের কথায়, গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে একটা আভাস মিলছিল তৃণমূলের থেকে মুখ অনেকটাই ঘুরিয়ে নিয়েছেন তফসিলি জাতি-জনজাতির মানুষ। তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ধর্মীয় মেরুকরণ। এ বার ভোটে যে মেরুকরণের প্রভাব পড়তে পারে, তার আন্দাজ করা গিয়েছিল। বোলপুর কেন্দ্র নিয়ে তেমন কোনও চিন্তা না থাকলেও শাসকদলের দুশ্চিন্তা ছিল বীরভূম নিয়ে। ইভিএমেও তার প্রতিফলন ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফল থেকে স্পষ্ট, দুবরাজপুর সিউড়ি, সাঁইথিয়া রামপুরহাট শহর ও ব্লক এবং মহম্মদবাজারে একাংশে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। অন্য দিকে, মুরারই, হাঁসন, নলহাটির মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। সিউড়ির গণনাকেন্দ্রে কাউন্টিং এজেন্ট হিসাবে থাকা এক তৃণমূল কর্মী এ দিন জানালেন, শুধুমাত্র মুরারই বিধানসভা এলাকা থেকেই তৃণমূল লিড পেয়েছে ৬০ হাজারেরও বেশি। যা শতাব্দীর জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে।

তবে ঘটনা হল, দুই আসনে জিতেও তৃণমূল উল্লাস করতে পারছে না। দলের নেতাদের একাংশ বলছেন, রাজ্য জুড়ে ফল খারাপ হওয়ায় প্রকাশ্যে উচ্ছ্বাস দেখানো সম্ভব নয়। সেটা ভালও দেখায় না। অন্য দিকে, বিজেপি হেরেও বিজয় উৎসব নিয়ে পরিকল্পনা করছে। দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘আমাদের তিনটি লক্ষ্য ছিল। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা, রাজ্যে ক্ষমতা বাড়ানো এবং বীরভূম কেন্দ্রে জয়। দু’টো লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। বীরভূমেও আমরা যথেষ্ট লড়াই দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছি। তাই উচ্ছ্বাস হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement