সাজাপ্রাপ্তেরা। —নিজস্ব চিত্র।
স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে অন্তরায় হয়েছিলেন, তাই খুন হয়েছিল এক যুবক। বছর ১১ আগে খয়রাশোলে ঘটে যাওয়া সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য ওই যুবকের স্ত্রী ও তাঁর চার বন্ধুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাল দুবরাজপুর আদালত। মঙ্গলবার দুবরাজপুরের দ্রুত নিষ্পত্তি আদালতের বিচারক আবসার আলি মোল্লা ওই সাজা শুনিয়েছেন বলে জানান মামলার সরকারি আইনজীবী রাজেন্দ্রপ্রসাদ দে।
সাজাপ্রাপ্তেরা হলেন তপতী পাত্র, পরিমল পাল, ঝন্টু ওরফে দেবব্রত পাল, পাণ্ডব পাল এবং বামাপদ মণ্ডল। প্রত্যেকের বাড়ি খয়রাশোলের চূড়োর রথতলায়। রাজেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘পরিকল্পনা করে খুনের জন্য সকলের যাবজ্জীবন এবং ৫০০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাস কারদণ্ড। এবং ২০১ অর্থাৎ প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার জন্য ৫ বছর কারাবাস এবং ৩০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সব সাজাই একসঙ্গে চলবে।’’
তিনি জানান, আদতে পাঁচড়ার বাসিন্দা হলেও মামারবাড়ি চূড়োতেই থাকতেন পেশায় দর্জি বলরাম পাত্র। বলরাম দর্জির কাজ করতেন পাণ্ডবেশ্বরে। ঘটনার দু’ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তপতী ও বলরামের। ২০০৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর বলরামের (৩৩) ঝুলন্ত দেহ মেলে চূড়োর বাড়ি থেকে। কিন্তু প্রথম থেকেই তাঁর আত্মীয় ও পরিজনেরা মৃত্যুটিকে আত্মহত্যা বলে মানতে পারেননি। পুলিশ দেহ নামালে দেখা যায় শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। তখনই বলরামবাবুকে খুন করা হয়েছে বলে সন্দেহ দৃঢ় হয়।
আত্মীয় স্বজনদের দাবি ছিল, স্ত্রী তপতীদেবীর সঙ্গে বলরামের বন্ধু পরিমলের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য তপতীদেবী ও পরিমল পালের নামে অভিযোগ দায়ের করেন বলরামবাবুর মামাতো ভাই শান্তি পাল। পুলিশ তপতীকে ধরার পরে খুনে জড়িতে বাকিদেরও নাম বের করে। মোট ১২ জনের সাক্ষ্য প্রমাণ দেখে বিচারক সাজা শুনিয়েছেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী পরে বাদী পক্ষের হয়ে মমলায় থাকা তপন সাহানা বলেন, ‘‘পুলিশি জিজ্ঞাসায় বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্যই খুন এই তত্ব উঠে আসে। উদ্ধার হয় শাবল হাতুরি, দড়ি। ময়নাতদন্তেও খুনের ইঙ্গিত ছিল। পাঁচজনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেয় পুলিশ।’’ অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী প্রলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এই রায়ে আমরা মোটেই খুশি নই, উচ্চ আদালতে যাব।’’
অভিযোগকারি শান্তি পাল বলেন, ‘‘শান্তি পেলাম, সাজা শোনার পর।’’