দাঁতাল রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা। — ফাইল চিত্র।
মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিনেই অঘটন ঘটেছিল। বৃহস্পতিবার সকালে জলপাইগুড়ির মহারাজঘাট এলাকায় অর্জুন দাস নামে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পিষে মেরে ফেলে একটি বুনো হাতি। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে সতর্ক হল বন দফতর। বাঁকুড়া জেলার জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল। কারণ, হাতির ভয় রয়েছে বাঁকুড়ার বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় এবং সোনামুখী এলাকায়। বন দফতর সূত্রে খবর, ওই ৩টি রেঞ্জের বিভিন্ন জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৮০টি হাতি।
হাতি উপদ্রুত বাঁকুড়ার জঙ্গল লাগোয়া ৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রকে ইতিমধ্যেই ‘বিপদপ্রবণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে বন দফতর। বড়জোড়া হাইস্কুল, বেলিয়াতোড় হাইস্কুল এবং গদারডিহি হাইস্কুল এই ৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলি থেকে পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পৌঁছতে পারে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বন দফতর। জঙ্গলের পথগুলির প্রতিটিতে যথেষ্ট সংখ্যক হুলা পার্টি মোতায়েন করা হয়েছে। এই প্রথম জঙ্গল লাগোয়া ২০টি গ্রাম থেকে সব মিলিয়ে শতাধিক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করেছে বন দফতর।
বাঁকুড়ার জঙ্গলের রাস্তায় হুলা পার্টি। — নিজস্ব চিত্র।
পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য মোট ১৪টি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে তার জন্য ইলেকট্রিক ফেন্সিং রয়েছে এমন পথকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র সেই পথ ধরেই যাতায়াতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গাড়িচালকদের। বন দফতরের বেলিয়াতোড় রেঞ্জের আধিকারিক মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘বড়জোড়া এলাকার হাতিগুলি রয়েছে বৈদ্যুতিক বেড়ার মধ্যে। তা-ও আমরা মাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা কোনও ফাঁকফোকর রাখিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করা হবে।’’
এমনিতেই সারা বছর হাতির দেখা পাওয়া যায় বাঁকুড়ার পাবয়া, ডাকাইসিনি, কালপাইনি-সহ জঙ্গলঘেরা বিভিন্ন গ্রামে। স্কুল-কলেজ থেকে বাজার, এমনকি, দৈনন্দিন কাজে যাতায়াতের পথে মাঝেমধ্যেই সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় হাতির হামলার মুখে। বিভিন্ন সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসতে গিয়ে যাতে হাতির হানার মুখে পরীক্ষার্থীদের না পড়তে হয় সে জন্য বন দফতরের এই ব্যবস্থায় স্বস্তিতে পরীক্ষার্থীদের পরিবার। ডাকাইসিনি গ্রামের বাসিন্দা মন্মথনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘জঙ্গলপথে কী ভাবে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাতায়াত করব তা নিয়ে একটা চিন্তা ছিলই। বন দফতর দায়িত্ব নেওয়ায় এখন আমরা নিশ্চিন্ত।’’
এমনিতেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার চিন্তা রয়েছে পরীক্ষার্থীদের মাথায়। তার উপর হাতির আতঙ্ক! ডাকাইসিনি গ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রানি সিংহের বক্তব্য, ‘‘সারা বছরই আমাদের হাতির আতঙ্ক নিয়েই পড়াশোনা করতে হয়। বন দফতরের এই ব্যবস্থায় আর যাই হোক অন্তত নিরাপদে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারব।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলের রাস্তায় পুলিশ বাহিনীর প্রচার। — নিজস্ব চিত্র।
জলপাইগুড়ির ঘটনার পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গল লাগোয়া থানাগুলিতে বিশেষ নজরদারি চালানো শুরু করেছে পুলিশ। জঙ্গল এলাকা দিয়ে পরীক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে সেই জন্য বন দফতর সতর্ক। খড়গপুর বন বিভাগের অধীনস্থ ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম থানার কলমাপুকুরিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় বন দফতরের কর্মীরা নজরদারি চালান জঙ্গল পথে। মাইকে প্রচার চালিয়ে সতর্ক করেন তাঁরা। বন দফতরের তরফে গাড়িতে করে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়। খড়্গপুরের বনকর্তা শিবানন্দ রাম বলেন, ‘‘হাতি নিয়ে যাতে কোনও আতঙ্ক তৈরি না হয় সেই জন্য জঙ্গল লাগোয়া রাস্তায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেশরেখা, নয়াগ্রাম, কলাইকুন্ডা-সহ বিভিন্ন জঙ্গলে হাতি রয়েছে। কোন এলাকায় হাতি রয়েছে তার হিসাব নিয়ে তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’