মৃতের পরিজনকে সাহায্যের আশ্বাস ফিরহাদের। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
মাড়গ্রামের দুই তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় বাকি অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। পাশাপাশি, তাঁর দাবি, তৃণমূলের পাশে মানুষ আছে। কেউ কিছু করতে পারবে না। মঙ্গলবার মাড়গ্রামের হাতিবাঁধা মোড়ে শহিদ বেদি উন্মোচন এবং স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন ফিরহাদ।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে খুন হন স্থানীয় মাড়গাম ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান মহুবুব আলি ওরফে ভুট্টুর ভাই লাল্টু শেখ এবং তার সহযোগী নিউটন শেখ। ঘটনায় কংগ্রেস নেতা সুজাউদ্দিন-সহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিনের স্মরণসভায় দুই নিহত তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী এবং তাঁদের সন্তানেরা উপস্থিত ছিলেন।
মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফিরহাদ তাঁদের ডেকে নেন এবং বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল কর্মীরা সারা জীবন তোমাদের পাশে আছি।’’ এর পরেই হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখানে এসপি, পুলিশ প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলাম। এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব আসামিকে তুলতে হবে।’’ পাশাপাশি, মামলা যাতে ভাল করে সাজানো হয় তা দেখার জন্য দলের রামপুরহাট ২ ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন তিনি।
সম্প্রতি সিউড়িতে সভা করে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সভা। সেই প্রসঙ্গ টেনে ফিরহাদ বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতী এনে রাজ্যে অশান্তি করার জন্য ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকায় সভা করা হয়েছিল। সামনে কংগ্রেস, সিপিএমকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পিছন থেকে বিজেপি এখানে অশান্তি করতে চাইছে।’’ তবে ফিরহাদের আশ্বাস, ‘‘যতই গুন্ডা এবং তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণ চালাও, মেরে পাস মা হ্যায় (আমার কাছে মা আছে)। এবং তৃণমূলের পাশে মানুষ আছে। কেউ কিছু করতে পারবে না।’’
যদিও সিপিএম জেল সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের কাছ থেকে সংখ্যালঘুরা এখন সরে আসছেন। সংখ্যালঘু ভোট টানতে ফিরহাদ হাকিমেরা এখন বিজেপি সিপিএমের সেটিং গল্প ফাঁদছে।’’ অন্য দিকে, বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা, ‘‘মন্ত্রী যখন দেখছেন সংখ্যালঘুরা জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে থাকতে চাইছেন, তখন এ সব কথা বলে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন।’’ ফিরহাদ হাকিম ছাড়া জেলার দুই সাংসদ শতাব্দী রায়, অসিত মাল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহও এ দিনের স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন।
জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাড়গ্রামের ঘটনায় এফআইআর-এ থাকা ২০ জনের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা পলাতক। বাকিদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।’’
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, মাড়গ্রামের ঘটনায় মূল আসামীরা ধরা পড়েছে। তারা যাতে জামিন পেতে না-পারে তার জন্য পুলিশ ভাল ভাবে ঘটনার তদন্ত করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ।