কোটশিলার সিমনি গ্রামে যে ক’টি শৌচালয় আছে, তার মধ্যে কয়েকটি বেহাল। —নিজস্ব চিত্র।
সন্ধ্যা ঘনালেই লোকালয়ে চিতাবাঘ ঢুকছে বলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অথচ ঘরে ঘরে শৌচাগার না থাকায় দুর্ভাবনায় রয়েছেন কোটশিলার সিমনি গ্রামের বাসিন্দারা।
সিমনি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ জানান, মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে কিছু বাড়িতে ভাঙাচোরা শৌচাগার থাকলেও, অনেকের কপালে তা-ও জোটেনি। খুব কম পরিবারেই ব্যক্তিগত শৌচাগার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামটির অধিকাংশ লোকজনের ভরসা সেই মাঠঘাটই। এই পরিস্থিতিতে চিতাবাঘের আতঙ্কের আবহে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। একই কারণে চিন্তায় বন দফতরও।
বাসিন্দাদের একাংশের মাঠেঘাটে শৌচকর্মে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সরস্বতী কালিন্দী। তাঁর আশ্বাস, ‘‘ওই গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে যাতে শৌচাগার তৈরি করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কমবেশি হাজার খানেক লোকজনের বাস সিমনিতে। পরিবারের সংখ্যা প্রায় ২৫০। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের বাসই বেশি।
নীচপাড়ার কর্মকার পাড়ার হীরালাল কর্মকারের দাবি, ‘‘আমাদের অনেকেই আবেদনের পরেও শৌচাগার পাইনি। কেন পাইনি, কেউ জানি না। তাই চিতাবাঘের হামলার ভয় থাকা সত্ত্বেও আমাদের সেই মাঠেঘাটেই রাতে, ভোরে যেতে হচ্ছে।’’ জিতলাম হেমব্রমের দাবি, সরকার থেকে শৌচাগার বানিয়ে দেওয়া হলেও সেটির যা অবস্থা, ব্যবহার করা যায় না। তাই নদীর পাড়েই তাঁরা যান। পঞ্চানন পাল নামে আর এক বাসিন্দার দাবি, জলের ব্যবস্থা নেই। তাই জল বয়ে শৌচাগারে আর কতদিন নিয়ে যাব! তাই খোলা মাঠই ভরসা।’’
বিডিও (ঝালদা ২) অভিষেক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টা নজরে এসেছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকায় ৩০০টি শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিছু লোকজনের মধ্যে শৌচাগার ব্যবহারের সচেতনতারও একটা অভাব রয়েছে। প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে প্রচার চলছে।’’
মাঠে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে উদ্বেগে বন দফতরও। পুরুলিয়ার ডিএফও কার্তিকায়েন এম বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ অফিসারকে এ ব্যাপারে ব্লক প্রশাসনকে চিঠি লিখতে নির্দেশ দিয়েছি। আমি নিজেও বিষয়টা জেলাশাসকের নজরে আনব।’’
বাসিন্দারা জানান, গত কিছু দিন ধরেই চিতাবাঘের আনাগোনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ওই গ্রামে। মাঝে মধ্যে রাত ঘনালে লোকালয়ে চিতাবাঘ ঢুকে পড়ছে। এ পর্যন্ত বিপত্তি কিছু ঘটেনি। তবে তা এড়াতে সতর্কতামূলক নানা ভাবে প্রচার চলছে বলে দাবি দফতরের। চলছে নজরদারিও।