খটখটে। নিজস্ব চিত্র
টানা দু’সপ্তাহের বেশি বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টে চড়া রোদে ঝলসে যাচ্ছে মাঠের ধান। তাই পুজোর মুখে উদ্বেগে রয়েছেন সেচহীন পুরুলিয়ার চাষিরা। বান্দোয়ান থেকে ঝালদা বা বাঘুমণ্ডি থেকে নিতুড়িয়া— সর্বত্র এক ছবি। সবারই এক কথা, এই চাষটুকুই তাঁদের সম্বল। এ বার মার খেলে আগামী একটা বছর কী করে চলবে? ছেলেপুলের মুখে কী ভাবে খাবার তুলে দেবেন তাঁরা? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মাথায়।
জেলা কৃষি দফতরও মানছে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে। আগামী ক’দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না নামলে, বাইদের ধান শুকিয়েই যাবে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ তিন লক্ষ হেক্টরের কিছুটা বেশি। তার মধ্যে বাইদ অর্থাত উঁচু জমি অর্ধেক। ৩০ শতাংশ কানালি অর্থাৎ সমতল, ১০ শতাংশ বহাল অর্থাত নিচু জমি। বাকি ১০ শতাংশ টাঁড় অর্থাৎ পতিত জমি।
অর্থাৎ চাষিদের বোনা মোট ধানের অর্ধেকটাই বাইদ জমিতে রয়েছে। বৃষ্টির অভাবে বাইদ অর্থাৎ উঁচু জমিরই ধান প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, আমনের মরসুমে ভাদ্রের শেষে ধানের থোড় আসে। এই সময়টাতে বৃষ্টি প্রয়োজন। এ বছর থোড় আসার আগেই আকাশ থেকে মেঘ উধাও হয়ে গিয়েছে। ফলে থোড় আসার মুখেই ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, চলতি মরসুমে ঠিক সময়ের মধ্যে চাষিরা মাঠে ধান লাগিয়ে ফেলেছিলেন। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ বার জুন থেকেই বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। তবুও চাষিরা ঠিক সময়ের মধ্যেই ধান লাগিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দিল তার পরেই। জুন মাসে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৮ মিলিমিটার। জুলাই মাসেও বৃষ্টির ঘাটতি স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ মিলিমিটার কম ছিল। অগস্টে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ মিলিমিটার। পরের মাস অর্থাৎ যখন ধানে থোড় আসে, সেই সময়ে বৃষ্টির প্রয়োজন সব থেকে বেশি থাকে, সেই সেপ্টেম্বরে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ১০০ মিলিমিটার।
দফতরের তথ্য মোতাবেক, চলতি চাষের মরসুমে বৃষ্টির ঘাটতির মোট পরিমান ২৭৩ মিলিমিটার। আশিষবাবু বলেন, ‘‘গত ২১ সেপ্টেম্বর শেষ বৃষ্টি হয়েছিল। তারপরে আর বৃষ্টি হয়নি। সময় মতো বৃষ্টি পেলে চাষিরা ভাল ফলন পেতেন।’’ দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, দেখা গিয়েছে গোটা বর্ষার মরসুমে ১৪টি এমন দিন থাকে, যে দিনগুলিতে মরসুমের মোট বৃষ্টিপাতের ৬৫ শতাংশ বৃষ্টি হয়। কিন্তু এ বারে সে রকম দিন মিলেছে কম।
জেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, রোদে খেত শুকিয়ে গিয়েছে। বাইদ ও কানালি জমির অবস্থা প্রায় এক। বহাল জমিতে অল্প ভিজে ভাব রয়েছে। ঝালদা ১ ব্লকের মাঠারি গ্রামের বাসিন্দা গণপতি মাহাতো বা হুড়ার খৈরি গ্রামের বাসিন্দা দেবজিৎ মাহাতোদের সম্বল বলতে চাষই। তাঁদের কথায়, ‘‘জলের অভাবে চোখের সামনে শুকিয়ে যাচ্ছে ধান। সর্বনাশ হয়ে গেল। সারা বছরের খাওয়াদাওয়া তো বটেই, পুজো, বিয়ে থেকে চিকিৎসা, ছেলেমেয়ের লেখাপড়া সব কিছুই চাষের রোজগারে চলে। এ বার কী করব আমরা?’’ পুরুলিয়া ২ ব্লকের দুমদুমি গ্রামের বাসিন্দা দুর্গাচরণ রাজোয়াড়দুর্গাচরণবাবুর শঙ্কা, ‘‘এখনই যদি বৃষ্টি নামে, তাহলেও কতটুকু বাঁচবে কে জানে? দুর্গাপুজোর আনন্দ মাথায় উঠে গিয়েছে।’’