ভুট্টা গাছ। —ফাইল চিত্র।
খামখেয়ালি বৃষ্টি। তাই আমনের উপরে ভরসা কমিয়ে বিকল্প চাষে উৎসাহিত করতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা কৃষি দফতর। এ বার তাই আরও বেশি পরিমাণে হাইব্রিড ভুট্টা, অড়হর, বাদাম ও রাগি চাষে প্রচুর চাষিকে যুক্ত করেছে কৃষি দফতর। সূত্রের দাবি, এ বার প্রায় ৫৫ হাজার চাষি বিকল্প চাষ করছেন। পুরুলিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা আদিত্য দুয়ারির দাবি, ‘‘বিকল্প চাষের ফসল বিক্রির ক্ষেত্রে চাষিদের সঙ্গে খাদ্য বিপণন দফতরের যোগসূত্র তৈরি করে দেবে কৃষি দফতর।’’
রুখা জেলা হিসাবে পরিচিত পুরুলিয়ায় গত বছরও পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ব্যাহত হয়েছে আমন ধানের চাষ।উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যায়নি। এ বারেও জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি ৪০ শতাংশের বেশি। কৃষি দফতরের আশঙ্কা, জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি না মিটলে এ বারেও আমন চাষ ব্যাহত হতে পারে।
সেই প্রেক্ষিতেই কম জলে ফলন হয় এমন ফসল উৎপাদনে চাষিদের উতসাহিত করতে মাঠে নেমেছে কৃষি দফতর। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা, স্টেট প্ল্যান ও জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনে চাষিদের দেওয়া হয়েছে হাইব্রিড ভুট্টা, অড়হর, বাদাম ও
রাগির বীজ।
কৃষি দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, আদতে চাষিরা বিকল্প চাষে ধীরেধীরে উৎসাহিত হয়ে ওঠাতেই পুরুলিয়ায় বাড়ছে বিকল্প চাষের এলাকা। উপ-কৃষি অধিকর্তা আদিত্য দুয়ারি বলেন, ‘‘উঁচু, ডাঙা জমিতে সহজেই হাইব্রিড ভুট্টা, অড়হর ও বাদামের মতো ফসল কম জলে চাষ করা সম্ভব। পুরুলিয়ায় উঁচু, ডাঙা জমির পরিমাণ বেশি। তাই চাষিরা ওই ফসল চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন।’’ তাঁর দাবি, গত বছর থেকেই পুরুলিয়ার চাষিদের একাংশ সাফল্যের সঙ্গে রাগি চাষ করছেন। এ বারেও ভাল চাষ হবে বলেই আশাবাদী তাঁরা।
গত কয়েক বছরে নিতুড়িয়া ব্লকের কুইরিপাড়া গ্রামে কুড়ি-তিরিশ জন চাষি ভুট্টা ফলিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন। ওই ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা পরিমল বর্মণ বলেন, ‘‘এক হেক্টর জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন টন ভুট্টার ফলন হয়। কম জলে এই চাষ হয় বলে চাষিরা ভুট্টা চাষে ক্রমশ উৎসাহিত হয়ে উঠছেন।’’
চাষি রামচন্দ্র কুইরি বলেন, ‘‘স্থানীয় পারবেলিয়া, সড়বড়ির বাজার ছাড়াও পাশের পশ্চিম বর্ধমানের বাজারে ভুট্টার চাহিদা ভালই। তাই চাষ করে ফসল বিক্রির ভাবনা থাকে না।”
অন্যদিকে নতুন চাষিদের ওই বিকল্প চাষের খুঁটিনাটি শেখাতে ব্লকগুলিতে শুরু হয়েছে প্রশিক্ষণ শিবির।রঘুনাথপুর ২ ব্লক ইতিমধ্যেই চাষিদের নিয়ে শিবির করেছে।
ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা মুক্তেশ্বর সর্দার বলেন, ‘‘চাষে সাফল্য পেতে বীজ শোধন থেকে শুরু করে সারিবদ্ধ ভাবে বীজ রোপণ, ফসল কাটার পরে তা
সংরক্ষণের পদ্ধতি জানা জরুরি। শিবির করে চাষিদের সেই দিকগুলি সম্পর্কে বিশদে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”