জল ছাড়া চলছে সিউড়ির তিলপাড়া জলাধার থেকে। নিজস্ব চিত্র।
এক দিনের ভারী বৃষ্টিতে জেলার কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। লাভপুরের দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যার ভ্রূকুটি তৈরি হয়েছে। তবে, নিম্নচাপের হাত ধরে আসা এই বৃষ্টি আশীর্বাদ স্বরূপ, বিশেষত আমন চাষে। এমনটাই বলছে জেলার কৃষি দফতর।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরে আমন চাষের লক্ষ্য মাত্রা ছুঁতে পারা যায়নি শুধুমাত্র সময়ে বৃষ্টিপাত না-হওয়ায়। পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে চলতি বছর খরিফ মরসুমে ধান চাষের এলাকা কিছুটা কমিয়ে বিকল্প ফসল বা ফসল বৈচিত্র্যের ভাবনা নিয়েছে কৃষি দফতর। কিন্তু, জুন ও জুলাইয়ে ঠিকঠাক বৃষ্টি না-হওয়ায় এ বারেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে, বৃস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি পেয়েছে জেলা, তাতে সেই সংশয়ে ইতি পড়েছে। কৃষি দফতরের তথ্য বলছে, অগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ২৯৫.৭ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত, দু’দিনেই তার অর্ধেকের বেশি পরিমাণ বৃষ্টি পেয়েছে জেলা। গড় বৃষ্টিপাত ১৬০.২ মিলিমিটার।
তবে, এ যাত্রায় বোলপুর ও সিউড়ি মহকুমার ব্লকগুলি যতটা বৃষ্টি পেয়েছে, সেই তুলনায় কম পেয়েছে রামপুরহাট মহকুমার ব্লকগুলি। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে লাভপুর ব্লকে, ২৯২ মিলিমিটার। জেলার চারটি ব্লক ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃ্ষ্টি পেয়েছ। যা শুধু আমন চাষে ভরসা জোগায়নি, জুন-জুলাইয়ের বৃষ্টি ঘাটতি এক ধাক্কায় ৩৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। গতি এসেছে ধান রোপণেও। এ বার ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে গোটা জেলায়। কম বৃষ্টির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৬০০ জমিতে ধান রোয়া গিয়েছিল। বৃষ্টির পরে ২ অগস্ট পর্যন্ত ধান রোয়া গিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি উপঅধিকর্তা (প্রশাসন) শিবনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিতে ধান চাষ লাভবান হবে। উঁচু এলাকাগুলি, যেখানে বৃষ্টি পর্যাপ্ত না হলে রোয়া সম্ভব হচ্ছিল না, সেখানেও এ বার ধান রোয়া যাবে। পাশাপাশি এক দিনই ভারী বৃষ্টি হওয়ায় নিচু এলাকা থেকে জলও নেমে যাবে। আনাজ চাষ নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা ছিল। যদিও উদ্যানপালন দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) সুফল মণ্ডল বলেন, ‘‘এক টানা বৃষ্টি এক দিনই স্থায়ী হওয়ায় এখন জল জমি থেকে নেমে গিয়েছে। তাই আনাজ চাষেও বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’’
শুক্রবার সকাল থেকে জেলার যে-সব কজ়ওয়ে ডুবে গিয়েছিল, সেগুলির অধিকাংশ থেকেই জল নেমেছে। শুধু নলহাটির বৈধরা জলাধার থেকে জল ছাড়ায় নতুন করে ব্রাহ্মণী নদীর উপরে দেবগ্রাম ও বারুনীঘাটা কজ়ওয়ে ডুবেছে। কঙ্কালীতলা মন্দির চত্বরে এখনও হাঁটু জল রয়েছে। পুজো বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ কঙ্কালীতলায় শবদাহের বৈদ্যুতিক চুল্লিও। দ্বারকা নদের জল ঢুকেছে তারাপীঠ মহাশ্মশানেও। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, পরিস্থিতির উপরে লাগাতার নজর রাখা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ছুটি বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মীদের।
তিলপাড়া, হিংলো, বৈধরা ও ডেউচা জলাধার থেকে অল্পবিস্তর জল লাগাতার ছাড়ছে সেচ দফতর। জেলাশাসক বিধান রায় এ দিন জানান, জেলার জলাধারগুলি থেকে অল্প পরিমাণে জল ছাড়া হচ্ছে, যাতে বড়সড় ক্ষতি এড়ানো যায়। তবে, সেচ দফতর সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে বেশি জল ছাড়তেই হবে।