কর্মীদের নিয়ে মৌসুমী। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের টিকিট পাওয়ার পরেও, নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল। অন্য দিকে, প্রার্থিতালিকায় নাম না থাকলেও, ঘাসফুলের পতাকা নিয়ে মনোনয়নপত্র তোলা বা দাখিল করা—মঙ্গলবার এমন নানা ঘটনার সাক্ষী রইল পুরুলিয়া শহর।
এ দিন মনোনয়নে কৌতূহলের কেন্দ্রে ছিলেন শহর মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী মৌসুমী ঘোষ। দল তাঁকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছিল। তবে বিদায়ী বোর্ডে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিনিধি মৌসুমীর দাবি ছিল, পুরনো ওয়ার্ডেই প্রার্থী করা হোক। তা থেকে বিতর্কের শুরু এবং তার পরে, এ দিন নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দাখিল করেন তিনি। মৌসুমী বলেন, “এত দিন নিজের ওয়ার্ডকে বাগানের মতো করে সাজিয়েছি। এলাকার মানুষও চান, পুরনো ওয়ার্ডে প্রার্থী হই। দলকে তা জানিয়েছিলাম। তবু ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হল। আমি যে টিকিটের প্রত্যাশী নই, তা প্রমাণিত। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
তৃণমূলের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই কেমন হবে? মৌসুমীর জবাব, “শাসকদল তো মানুষের কথা বলে। তা হলে মানুষ যখন চাইছেন, তা হলে কেন আমাকে প্রার্থী করা হল না? জয় নিয়ে আমি একশো ভাগ আত্মবিশ্বাসী।” ওই ওয়ার্ডে মনোনয়ন দাখিল করে তৃণমূল প্রার্থী রথীন্দ্রনাথ মাহাতোর টিপ্পনী, “উনি যে সাজানো বাগানের কথা বলছেন, তা তো রাজ্য সরকার সাজিয়েছে। আর বাগানে তো কিছু আগাছাও থাকে।” ওয়ার্ডে উন্নয়নের কাজ কতটা হয়েছে, সে প্রশ্ন এড়িয়ে রথীন্দ্রনাথ বলেন, “আমরা দলের সৈনিক। আমার বিশ্বাস, উনি দলের হয়েই কাজ করবেন।” মৌসুমীর অনুপস্থিতিতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দাবিদার দুর্বা দত্তের নামই বিবেচনায় রেখেছে দল। সরকারি ভাবে নাম ঘোষণা করা না হলেও, তিনি এ দিন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
এ দিন সকলের নজর ছিল ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দিকেও। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা বিদায়ী বোর্ডের উপ-পুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডলের নাম প্রার্থিতালিকায় ছিল না। ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী সত্য বাউড়ি নাম প্রত্যাহার করার পরে, দল বৈদ্যনাথকে প্রার্থী করছে কি না, সে দিকে নজর ছিল সকলের। এ দিন দলীয় পতাকা ও অনুগামীদের নিয়ে মনোনয়ন তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “দলের প্রার্থী হতেই মনোনয়ন তুলেছি। দল যা নির্দেশ দেবে, মানব।”
বিধানসভা ভোটে পুরুলিয়া আসনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পরে, অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব উঠে এসেছিল। তার পরে, দলের তরফে পুরনো কিছু কাউন্সিলরকে টিকিট না দেওয়ার সুপারিশ ছিল। কিন্তু পুরনো ছয় কাউন্সিলর টিকিট পাওয়ার পরে, বাকিরা ব্রাত্য থাকবেন কেন, সে প্রশ্ন ওঠে। বিশেষত চর্চার কেন্দ্রে ছিলেন বৈদ্যনাথ মণ্ডল ও শামিমদাদ খান। তবে ইতিমধ্যে ছেলে সোহেলদাদ খানকে নিয়ে দল ছেড়েছেন শামিমদাদ। সে পরিস্থিতিতে সকলের নজর ছিল বৈদ্যনাথের উপরে।
দলের একটি সূত্রে খবর, গত সোমবার সন্ধ্যায় সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমেন বেলথরিয়ার সঙ্গে বৈদ্যনাথকে নিয়ে বৈঠকে বসেন দলের শহর নেতৃত্বের একাংশ। বৈঠকে বরফ গলার পরে, তাঁর নাম রাজ্যের কাছে সুপারিশ করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা না করা হলেও, দলের তরফেই মনোনয়ন তুলেছেন তিনি।
জেলা সভাপতি বলেন, “দু’টি ওয়ার্ডের প্রার্থী নাম প্রত্যাহার করেছেন। একটি ওয়ার্ডে ভুল নাম প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে প্রার্থী দেওয়া হবে। আর কয়েকটি ওয়ার্ডের কর্মীদের বক্তব্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। যা নির্দেশ আসবে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে।”