পড়ে: এই মোটরবাইকেই যাচ্ছিলেন বাবা ও ছেলে। নিজস্ব চিত্র
পুকুরের পাড়ে ঝোপ-জঙ্গলে ঘাপটি মেরে ছিল দাঁতালটা। ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। দূর থেকে ঠাহর করা যাচ্ছিল না। যখন চোখে পড়ল, একেবারে সামনে চলে এসেছে। চেষ্টা করেছিলাম মোটরবাইক ঘুরিয়ে নিতে। ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়োয় আমরা দু’জনেই পড়ে যাই। বাবাকে তুলে দু’জনে মিলে ছুটতে শুরু করি। পুকুরের পাড় দিয়ে।
আমরা তিন ভাই। দাদা কাজের সূত্রে জামশেদপুরে থাকে। আমি মেজ। ছোট ভাই সেনাবাহিনীতে আছে। বছর চারেক হল হুগলির কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াচ্ছি। সুযোগ পেলেই বাবা-মাকে দেখতে বাড়ি চলে আসতাম।
মঙ্গলবার ছুটি নিয়ে সপ্তাহের মাঝেই এসেছিলাম। বাবা বাড়ি পাশের জমিতে আনাজ ফলাতেন। এ বার টোম্যাটো করেছেন। ভোরে সেটাই ব্যাগে নিয়ে আমার সঙ্গে রওনা হয়েছিলেন। ঠিক ছিল, ঝালদা স্টেশনে আমায় ট্রেনে তুলে দিয়ে স্টেশন লাগোয়া পাইকারি বাজারে বিক্রি করে বাড়ি ফিরে আসবেন।
বেরিয়েছি যখন, ভোর ৪টে বাজে। ৫টা ৭-এ ঝালদা স্টেশনে ট্রেন। আমি মোটরবাইক চালাচ্ছিলাম। বাবা পিছনে বসেছিলেন। গ্রাম পেরিয়ে এক কিলোমিটার মতো গিয়েছি। তখনই দেখলাম দাঁতালটাকে।
ওর হাত থেকে বাঁচতে কিছুক্ষণ ছোটার পরে হাতিটাকে আর দেখতে পাচ্ছিলাম না। বাবায় পায়ে ব্যথা। ভাল করে ছুটতে পারছিলেন না। কাছেই একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছিল। বাবা দিশাহারা হয়ে ‘‘বাঁচাও-বাঁচাও’’ করে চিৎকার করে ওঠেন। এমন সময়ে হঠাৎ তেড়ে আসে হাতিটা। বাবাকে হ্যাঁচকা টানে সরিয়ে নিই। আমি নিজে বাড়িটার দরজার উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বাবাকে শুঁড়ে তুলে নেয় হাতিটা।
আমার ধাক্কায় বাড়ির টিনের দরজাটা ভেঙে গিয়েছিল। ভিতরের লোকজন শব্দ পেয়ে জেগে উঠেছিলেন। তাঁরাই আমাকে নিয়ে ছাদের উপরে উঠে যান। বাবাকে ততক্ষণে শুঁড়ে তুলে আছড়ে ফেলেছে হাতিটা।
হাতিটা নীচের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। আমরা ছাদে। কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। তখন সওয়া ৪টে হবে। তার পর থেকে কী ভাবে, কী হল জানি না আর কিছু।