শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়ার পরে এ বার পুরুলিয়া। হাতির হানায় প্রাণ হারালেন এক যুবতী। রবিবার ভোরে শৌচে বেরিয়ে হাতির হানায় মৃত্যু হয় কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটের ডিমু গ্রাম লাগোয়া কুমারডি টোলার বাসিন্দা মমতা কুমারের (২৭)। পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “দলছুট একটি হাতির হানায় ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় বনকর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। হাতিটি কাছাকাছি জঙ্গলে রয়েছে। তার গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।” দ্রুত যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়, দফতরের তরফে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আশ্বাস তাঁর।
মৃতার পরিজনদের দাবি, এ দিন ভোর প্রায় পৌনে ৪টা নাগাদ শৌচকর্ম সারতে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন মমতা। ঘন কুয়াশা থাকায় কাছেই হাতির উপস্থিতি হয়তো বুঝতে পারেননি তিনি। হাতিটি তাঁর দিকে তেড়ে গেলে প্রাণে বাঁচতে দৌড় লাগান তিনি। তবে রক্ষে মেলেনি। তাঁর পিছু নেয় দাঁতালটি। পরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে হাতি তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মারে। আশপাশের কিছু লোকজন বেরিয়ে চিৎকার জুড়লে জঙ্গলের পথ ধরে হাতিটি। কিছু পরে পুলিশ ও বন দফতরের লোকজন মমতাকে উদ্ধার করে কোটশিলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষার পরে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাপা আতঙ্কের আবহ। কুমারডি টোলায় নেমেছে শোকের ছায়া। কোনও রকমে নিজেকে সামলে মমতার বাবা পূর্ণ বলেন, “একটাই মেয়ে ছিল। সে-ও রইল না। এ ভাবে হাতির হানায় মেয়েটা চলে
যাবে, ভাবিনি।”
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই এলাকায় গত কয়েক দিন থেকে হাতিদের আনাগোনা রয়েছে। কোটশিলা লাগোয়া ঝালদা বনাঞ্চলের একেবারে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া কলমা পাহাড়ের জঙ্গলেও এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ৩০-৩৫টি হাতির একটি দল ঘাঁটি গেড়েছে বলে জানাচ্ছে বন দফতর। ওই দলে কয়েকটি শাবকও রয়েছে। দিন কয়েক আগে দলটি দু’ভাগ হয়ে যায়। বাকি হাতিগুলি লাগোয়া কোটশিলার দিকে চলে যায়। দফতরের অনুমান, কোটশিলার দল থেকে একটি হাতি দলছুট হয়ে এ দিনের কাণ্ড ঘটিয়েছে। এই মুহূর্তে ঝালদার কলমার জঙ্গলে ১৫টি ও কোটশিলার মাড়ামুর জঙ্গলে ১২-১৫টি এবং বাকি ৫-৭টি হাতি কোটশিলার সিমনির
জঙ্গলে রয়েছে।
ডিএফও-র তবে আশ্বাস, উদ্বেগের কিছু নেই। দফতরের তরফে নজরদারির পাশাপাশি মাইকে প্রচারও চলছে। মানুষজনকে
সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।