ভোগান্তি: বিষ্ণুপুর শহরের প্রান্তে ভেসে যাওয়া রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
বন্যার জলে ভরে থাকা সেচখালে স্নান করতে নেমে তলিয়ে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ার। শনিবার রাইপুর ব্লকের হাতকাটা এলাকার ঘটনা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতা সীতামণি মুর্মু (৫০) বারিকুল থানার হাতকাটা এলাকার বাসিন্দা। অন্য দিকে, শুক্রবার দামোদরর বানে তলিয়ে গিয়েছিলেন বড়জোড়ার পখন্না এলাকার ছোটমানার বাসিন্দা কানাই মণ্ডল (৪২)। শনিবার সকালে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে।
নিম্নচাপ কেটে গিয়ে রোদ উঠলেও বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কংসাবতী জল না ছাড়লেও বন্যার জলে টইটম্বুর হয়ে রয়েছে জেলার বেশির ভাগ সেচখালই। সকালে সীতামণি হাতকাটা এলাকা সংলগ্ন কংসাবতীর একটি সেচখালে স্নান করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই স্রোতে তলিয়ে যান তিনি। বিডিও (রাইপুর) দীপঙ্কর দাস জানান, ডুবুরি নামিয়ে বিকেলে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার বড়জোড়ার পখন্না এলাকার ছোটমানার বাসিন্দা কানাই মণ্ডল (৪২) দামোদরের জলে ডুবে থাকা চাষের জমি দেখতে গিয়ে স্রোতের টানে তলিয়ে যান। দিনভর তল্লাশি চালিয়েও তাঁর হদিস মেলেনি। রাতে ডুবুরি নামিয়ে খোঁজ শুরু হয়। উদ্ধার কাজে কলকাতা পুলিশের একটি দলকেও ছোট মানায় পাঠানো হয়েছিল। তবে তাঁরা উদ্ধার কাজ শুরু আগেই এ দিন সকালে কানাইয়ের দেহ ভেসে ওঠে।
বড়জোড়ার বিভিন্ন মানাচরে এ দিনও চারটি ত্রাণ শিবির চালু ছিল। বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ কেটে স্বাভাবিক হচ্ছে মানাচরগুলির জনজীবন। সোনামুখী ব্লকের মানাচরগুলিতে যে ত্রাণ শিবিরগুলি চালু করা হয়েছিল, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বড়জোড়া ব্লকের মানা এলাকার ত্রাণ শিবিরগুলি এখনও চালু রেখেছি আমরা।”
টানা নিম্নচাপ ও তার জেরে সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতিতে ব্যপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে জেলা জুড়ে। সোনামুখী, মেজিয়া, বড়জোড়া ও রাইপুর ব্লকে মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন ব্লকে প্রায় ১৫ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত৩০ হাজার বাড়ি।
জেলা জুড়ে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে রাস্তা ঘাটের। বিষ্ণুপুর শহরের সীমানায় লালবাঁধের পাড়ে বেলশুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি রাস্তা ভেসে গিয়ে গ্রামবাসী এবং পড়ুয়ারা বিপাকে পড়েছেন। লালবাঁধের অতিরিক্ত জল বেরিয়ে মাটি ধুয়ে এই বিপত্তি বলে জানা গিয়েছে। বেলশুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়তের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিষ্ণুপুর শহরে যাওযার রাস্তা সেটিই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতেও নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন বিষ্ণুপুর পরিমলদেবী বালিকা বিদ্যালয় এবং শিরোমণিপুর গ্রামের বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের পড়ুয়ারাও।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে প্রতিটি ব্লককে দ্রুত রাস্তা মেরামতির প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মৃত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “পুনরায় বৃষ্টি না হলে যে সব রাস্তায় এখনও জল জমে রয়েছে তা নেমে যাবে। সোমবারের মধ্যে সমস্ত ব্লককে নিজেদের এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার রিপোর্ট ও রাস্তা সারাইয়ের পরিকল্পনা জেলায় জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছি।”