সুনসান: মন্দার দোসর বৃষ্টি। সিউড়িতে বন্ধ দোকান। নিজস্ব চিত্র
শারদ উৎসবের মতো মন্দা বাজারের রেশ যে ধনতেরাসেও পড়তে পারে, ব্যবসায়ীদের অনেকের সেই আশঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা সত্যি করে ধনতেরাসের একেবারে আগে বাজারও কার্যত ফাঁকা। ক্ষুদ্র, মাঝারি থেকে বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এখন অপেক্ষায় ধনতেরাসের দিনে কী হয়। এমন পরিস্থিতির জন্য আর্থিক মন্দা এবং সোনা-চাঁদির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ, শুক্রবার ধনতেরাস। এই দিন সোনা-চাঁদি, কাঁসা-পিতলের জিনিস কেনা পরম্পরা। মূলত অবাঙালিদের এই পরম্পরা প্রচলিত থাকলেও নানা কারণে বাঙালিদের মধ্যেও এই উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে। যার জন্য ধনতেরাসের দিন মোটা অঙ্কের ব্যবসা করেন সোনা-চাঁদি, কাঁসা-পিতলের ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর রেকর্ড মাত্রায় ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ধনতেরাসের বাজার শুরু হয় উৎসবের ঠিক দু’দিন আগে থেকে। এই বছর সেই বাজারের অবস্থা সঙ্কটজনক বলেই সব মহলে দাবি। ব্যবসায়ীরা জানালেন, এই বছর সোনার দাম এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। তার উপরে আর্থিক মন্দার কারণে মানুষের হাতে সেই পরিমাণে টাকা নেই। তার জন্যই সোনার বাজার খারাপ। ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গিয়েছে, গত বছর ধনতেরাসের সময় ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৩০-৩১ হাজার টাকা। সেখানে এই বছর ১০ গ্রাম প্রতি পাকা সোনার দাম প্রায় ৩৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ, প্রায় আট হাজার টাকা দাম বেড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে চাঁদির দামও। গত বছরে ধনতেরাসের সময় চাঁদির কেজি প্রতি দাম ছিল ৩৯-৪০ হাজার টাকা। সেখানে এই বছর দাম প্রায় ৪৬ হাজার টাকা। বৃদ্ধি প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। একই সঙ্গে রয়েছে আর্থিক মন্দার প্রভাব।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে, বাজার ঘুরে জানা গেল, আগের বছর সোনা কিনেছেন এমন লোকজনও এই বছর অনেক কম সোনার কিংবা চাঁদির সামগ্রী কিনছেন। যাঁরা চাঁদির সামগ্রী নিতেন, তাঁরা পিতল অথবা কাঁসার দিকে ঝুঁকেছেন। বৃষ্টির কারণেও বাজারে বেশ খানিকটা প্রভাব পড়েছে। বৃহস্পতিবার সিউড়ি শহরের কিছু সোনার দোকানে গিয়ে দেখা গেল, বিক্রেতা ফাঁকা দোকানে বসে আছেন। সিউড়ি শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী তরুণকুমার সেন, কৃশানু ধারা, দেবাশিস দাসদের কথায়, ‘‘কয়েক মাস ধরেই সোনার ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। ভবিষ্যতে কী হবে, সেই নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। প্রতি বছর শারদ উৎসব এবং ধনতেরাসে সোনা-চাঁদির বড় চাহিদা থাকে। এই বছর তার ছিটেফোঁটাও নেই বললে চলে। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে কী ভাবে সোনা কিনবে।’’
একই সুর শোনা গিয়েছে শহরের বড় ব্যবসায়ীদের গলায়। সিউড়ি শহরে অবস্থিত কলকাতার একটি গয়না বিপণির কর্ণধার রায়হান ইকবাল, শহরের একটি গয়নার দোকানের মালিক অরিন্দম রায় বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এই বছর সোনার চাহিদা অর্ধেক। অন্য বার ধনতেরাসের দুই থেকে তিন দিন আগে বাজার শুরু হয়। এই বছর কোনও বাজার নেই বললেই বলে।’’
কপালে ভাঁজ পড়েছে বোলপুর ও রামপুরহাট শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরও। রামপুরহাট শহরের একটি গয়না দোকানের মালিক শুভদীপ মণ্ডল এবং ওই শহরে অবস্থিত কলকাতার একটি গয়না বিপণির কর্ণধার স্বরূপ সরকারের কথায়, ‘‘এই বছরের বাজার অনেক খারাপ। বুধবার থেকে অল্প বাজার শুরু হয়েছিল। বৃষ্টিতে সেটাও মাটি হয়ে গিয়েছে।’’ তবে কাঁসা-পিতলের চাহিদা আছে বলে জানালেন সিউড়ি শহরের কাঁসা-পিতলের সামগ্রীর দোকানের মালিকেরা। শহরের দুই ব্যবসায়ী শিবশঙ্কর ঘোষ এবং ইন্দ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘‘পিতল-কাঁসার চাহিদা আছে ঠিকই। কিন্তু, বৃষ্টির কারণে ক্রেতারা আসছেন না। বৃষ্টি কমলে বাজার হওয়ার আশা রয়েছে।’’