গোটা বাংলায় পুজো-পর্ব মিটলেও উৎসব এখনও শেষ হয়নি বাঁকুড়ার প্রাচীন মল্লগড়় বিষ্ণুপুরে।
গোটা বাংলায় পুজো-পর্ব মিটলেও উৎসব এখনও শেষ হয়নি বাঁকুড়ার প্রাচীন মল্লগড়় বিষ্ণুপুরে। দশমী রাত থেকে রাবণকাটা নাচে মেতেছেন নৃত্যশিল্পীরা। এই উৎসব চলবে দ্বাদশীর রাত পর্যন্ত। মল্ল রাজাদের আমল থেকে বিষ্ণুপুরে এই রীতি চলে এলেও এর জনপ্রিয়তা এখনও ম্লান হয়নি।
বিষ্ণুপুরের ইট, কাঠে, পাথরে যেমন জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস আর হাজার লোককথা, তেমনই এই শহরের আনাচ কানাচ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য লোকশিল্প সমৃদ্ধ লোকাচার। তেমনই এক লোকাচার হল রাবণকাটা নৃত্য। দশমীর দিন থেকে শুরু হয় প্রস্তুতি। এই নাচের জন্য হনুমান, বিভীষণ, সুগ্রীব ও জম্বুবান সাজেন চার শিল্পী। এই নৃত্যদলে থাকে আরও চার বাদক। তাঁদের কাঁধে থাকে লাগড়ে ও পিটেরা নামের বিশেষ প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। লাগড়ে, পিটেরার তালে তালে বিষ্ণুপুরের অলিতে গলিতে ঘুরে নাচ দেখিয়ে বেড়ান চার নৃত্যশিল্পী। জনশ্রুতি, রাম-রাবণের যুদ্ধে রাবণ নিহত হওয়ার আনন্দে রাম শিবিরে উচ্ছ্বাসের ধারা থেকে পরবর্তী কালে বীররসের রাবণকাটা নৃত্যের জন্ম।
আপাতত বিষ্ণুপুরের বুকে রাবণকাটা নৃত্যের একটি দলই টিকে রয়েছে। গৃহস্থের আবদার মেটাতে কখনও কখনও শিল্পীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও নাচ দেখান। নিজেদের সাধ্য মতো শিল্পীদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন দর্শকরা। শিল্পীদের কেউ সারা বছর ভ্যান চালান, আবার কেউ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। পুজোর মরসুমে রাবণকাটা নাচ দেখিয়ে তাদের বাড়তি একটু রোজগার হয়।
তিন পুরুষ ধরে বংশপরম্পরায় সুগ্রীবের ভূমিকায় রাবণকাটা নাচ দেখিয়ে আসছেন বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা সুকুমার অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সকলেই অত্যন্ত গরিব। পুজোর সময় এই নাচ দেখিয়ে বাড়তি একটু উপার্জন হয়। প্রবল গরমে ভারী পোষাক পরে নাচতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু বাবা-ঠাকুর্দার আমল থেকে আমরা এই নাচ করে আসছি। তাই এই শিল্পকে ছাড়তে পারিনি। তা ছাড়া মানুষকে আনন্দ দিতে পেরে আমরাও খুশি হই। তবে সরকারি ভাতা পাওয়ায় কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে।’’