এক দিকে, ‘বিদ্রোহী’দের ক্ষোভ প্রশমন। উল্টো দিকে, ভোট পরিচালনার কাজ ভাগ করে দেওয়া।
জেলায় দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে এই জোড়া দাওয়াই নিল বিজেপি নেতৃত্ব। যার জেরে দলের হয়ে কাজ না করার হুমকি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভোল পাল্টালেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের অনুগামীরা। শুক্রবার বৈঠকে করে তাঁদেরল পূর্বঘোষিত ‘কমর্বিরতি’র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেন ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। এ দিনই আবার সিউড়িতে একটি বৈঠকে এ বারের পুরভোটে এলাকায় দল পরিচালনার ভার চার জনের হাতে তুলে দিলেন বিজেপি-র নব নিযুক্ত জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়, সিউড়ি, বোলপুর, সাঁইথিয়া ও রামপুরহাটে পুরসভা ভোটে দলের মুখ হবেন, যথাক্রমে রামকৃষ্ণ রায়, কাশীনাথ মিশ্র, শ্যামল গোস্বামী এবং ব্রজগোপাল মণ্ডল। দলীয় সূত্রের খবর, দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে দুধকুমারের অনুগামী এবং বিরোধী বলে পরিচিত, দুই রকম নেতাই রয়েছেন।
দলীয় সূত্রের খবর, এ দিন স্থানীয় কালিকাপুর গ্রামে একটি বৈঠক ডাকেন ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক সভাপতি অতনু চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই তথাকথিত ওই কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক আগের দিনই দুধকুমারের গ্রাম কোটাসুরে এ রকমই একটি বৈঠকের পরে তাঁর অনুগামীরা ‘কর্মবিরতি’র সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের হয়ে কোনও কাজ না করার ডাক দিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, দুধকুমারকে স্বপদে না ফেরানো পর্যন্ত ওই কর্মবিরতি চলবে। এ দিন অতনুবাবু অবশ্য জানান, ব্লকে ন’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ছ’টি অঞ্চল কমিটির সভাপতি-সহ ৪০ জন ‘কর্মবিরতি’র সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ‘রেজোলিউশনে’ স্বাক্ষর করেছেন। বৃহস্পতিবার যাঁরা ওই ডাক দিয়েছিলেন, এ দিন তাঁদেরই অন্যতম দলের দক্ষিণ গ্রাম অঞ্চল কমিটি রসভাপতি প্রভঞ্জন মিত্র, বাজিতপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, “আমরা দুধকুমার মণ্ডলকে জেলা সভাপতির পদে ফেরানোর দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলাম। কিন্তু দুধকুমারবাবু আমাদের কাজের মধ্যে থেকেই যা করার, তা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ দিন ব্লক সভাপতিও আসন্ন পুরভোটে কাজে নামার নির্দেশ দিলেন। এই কারণেই আগের সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে এসেছি।” তাঁরা আরও জানান, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দলের কাজে নামলেও আগের দাবি থেকে সরে আসছেন না তাঁরা। দুধকুমার মণ্ডলকে পুরনো পদে কীভাবে ফেরানো যায়, আলোচনা করেই তার পরবর্তী কর্মপদ্ধতি তাঁরা ঠিক করবেন।
তাঁরা এমন যুক্তি দিলেও অন্য কোনও শোনা গিয়েছে অতনুবাবুর মুখে। ব্লক সভাপতির দাবি, “আবেগের পাশাপাশি ওই নেতা-কর্মীদের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে প্ররোচনাও কাজ করেছে।” কার প্ররোচনা, তা তিনি ভেঙে বলেননি। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দাবি, অতনুবাবুর আঙুল আসলে দুধকুমারের দিকেই। দলের সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি অবশ্য দাবি করেছেন, “আমি কর্মীদের বলেছি, দলের কাজ করে যেতে হবে। সেটাই আসল। কাউকে কোনও রকম প্ররোচনা দিইনি। সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ।
এ দিকে, পুরভোটের মুখে গৃহ-কোন্দল ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি নেতৃত্ব। দুধকুমারের অনুগামীদের এই ‘উলট-পুরাণ’ই তার প্রমাণ বলে দাবি করছেন দলের একাংশ। দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, “দলের সব গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের একটাই বার্তা দেওয়া হচ্ছে, এই পুরভোটের সময় নিজেদের মধ্যে লড়লে নিজেদেরই মরতে হবে। লোকসভা ভোটের পরে জেলায় দল একটা মজবুত জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুর্নীতি আর দুষ্কৃতীরাজে জড়িয়ে পড়া তৃণমূলকে হারানোর এটাই সুবর্ণ সুযোগ। তার জন্যই সবাইকে নিজের সেরাটা দিয়ে লড়াই জারি রাখতে হবে!” তাই দলে বিক্ষুব্ধদের (দুধকুমার অনুগামীদের) আপাতত বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পুরভোটের প্রচারে নামানোর বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অর্জুনবাবু। মুখে যদিও দলে কোনও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নেই বলেই দাবি করছেন। এ দিন সিউড়িতে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, প্রচারে শাসকদলের সন্ত্রাসই দলের বড় হাতিয়ার হতে চলেছে। জেলা বিজেপি আহ্বায়কের অভিযোগ, “ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ভাবে আমাদের প্রার্থীদের র্প্রার্থীপদ প্রত্যাহর করে নেওয়ার জন্য তৃণমূল প্রবল চাপ দিচ্ছে। আসছে প্রলোভনও। এখনও পর্যন্ত আমাদের দলের প্রার্থীদের নাম সে ভাবে প্রকাশ্যে না নিয়ে আসার মূল কারণও তা-ই।” পাশাপাশি রামপুরহাট থানার আইসি-র বিরুদ্ধে দলের কর্মীদের অযথা হেনস্থা করার অভিযোগ তুলেছেন অর্জুনবাবু। তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দলের তরফে লিখিত অভিযোগ জানানো হচ্ছে। অভিযোগ নিয়ে পুলিশ সুপারের বক্তব্য মেলেনি।