আলোচনা: বৈঠকে জেলাশাসক। সোমবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
কাজের অগ্রগতি বুঝতে মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো ‘সমন্বয় মডেল’ অনুসরণ করার রাস্তায় হাঁটল বীরভূম জেলা প্রশাসন।
উন্নয়নের কাজ কোথায়, কতটা হয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা মানুষ ঠিক মতো পাচ্ছেন কি না। কী চাহিদা এলাকাবাসীর। কোনও সমাস্যা থাকলে তা মেটাতে কী পথ নিতে হবে— জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে এলে পুরো নবান্নকেই জেলায় হাজির করান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য একটাই, জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের মুখোমুখি বসিয়ে প্রতিটি সূচক ধরে আসল ছবিটা যাতে বোঝা যায়।
সোমবার সিউড়ি ২ ব্লকে একই পদ্ধতি অনুসরণ করলেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। এ দিন সিউড়ি ২ ব্লকের কমিউনিটি হলে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক সহ পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরের আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বীরভূমের একাধিক অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন জেলাশাসক।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তফসিলি জনজাতিদের ছাত্রাবাসের পরিকাঠামো, ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে স্বনির্ভর দলের কাজের অগ্রগতি, সংখ্যালঘু ছাত্রাবাস, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির হালহকিকত, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব, কন্যাশ্রী ২ প্রাপকদের সংখ্যা, মিড-ডে মিল, সুবজসাথীর সাইকেল বিলি, ডিজিটাল রেশনকার্ড বিলি, গীতাঞ্জলি প্রাপকদের বাড়ি তৈরির কী অবস্থা, উদ্যানপালন, পানীয় জলের সমস্যা কোথায়-কেন, এমন নানা সূচক ধরে ধরে আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু বিষয়ে ব্লকের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বেশ কিছু বিষয়ে উষ্মা গোপন করেননি জেলাশাসক। কী করলে আরও ভাল ভাবে কাজ এগোতে পারে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত প্রশাসনিক কর্তাদের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, জেলাশাসক জানতে পারেন, গোটা সিউড়ি ২ ব্লকে মোট ১৭৯ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে নিজস্ব ভবন রয়েছে মাত্র ৯২টির। বাকিগুলি হয় এলাকার শিশুশিক্ষা কেন্দ্র না হয় প্রাথমিক স্কুল কিংবা মাদ্রাসা অথবা স্থানীয় ক্লাব, কারও বাড়িতে চলে। আরও উদ্বেগের হল ১১টি কেন্দ্র চলে পুরোপুরি খোলা আকাশের নীচে। ক্ষুব্ধ জেলাশাসক নির্দেশ দেন, ‘‘যে ভাবেই হোক এই পরিস্থিতি বদলান। কাছাকাছি কোনও জায়গায় সরান কেন্দ্রগুলিকে। প্রয়োজনে রান্নার শেড তৈরি করুন।’’
টানা সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠক সেরে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হয়ে থাকে। তবে এ দিন বিভিন্ন দফতরের জেলা ও ব্লকস্তরের আধিকারিকদের বৈঠকে এনে নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রতিটি ব্লকেই ধাপে ধাপে এমন বৈঠক হবে। বুধবার হবে খয়রাশোল ব্লকে।’’ জেলাশাসক আরও জানান, ব্লকের কোন কাজ কতটা হয়েছে, তার একটা সামগ্রিক ছবি উঠে এসেছে। বেশ কিছু সমস্যার কথাও বৈঠকে উঠে এসেছে। আইসিডিএসের সমস্যা, স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাসঘরের দাবি, কিছু পঞ্চায়েত এলাকায় লো-ভোল্টেজের সমস্যা ইত্যাদি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।
বিডিও (সিউড়ি ২) বিকাশ মজুমদার বলছেন, ‘‘আমরা কাজ করছি। তবে যে যে জায়গায় খামতি রয়েছে সেগুলি জেলাশাসকের পরামর্শ মেনে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব।’’