প্রতীকী ছবি।
কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যেত গ্রামের হস্তচালিত তাঁতের মাকুর খটাখট শব্দ। করোনা কালে সেই শব্দ উধাও। মাড়গ্রাম থানার বশোয়া, বিষ্ণুপুর, ললিতাকুন্ড, তেঁতুলিয়া, কালীদহ, নতুনগ্রাম, পাতনা, পোড্ডা এই সমস্ত গ্রামের তাঁত শিল্প বর্তমানে ধুঁকছে। কর্মহীন তাঁত শিল্পীরা।
জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ১৫ হাজারের বেশি তাঁতি আছেন, যাঁদের অনেকেই জাতীয় তাঁত দিবসে সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন ন্যূনতম রোজগারের একটি কাজ দেওয়া হোক বলে। দুর্গাপুজোর মতো বড় উৎসবের আগেও তাঁদের হাতে নেই রেশম সুতোর জোগান। রসদের অভাবে রেশম থান বোনার কাজ এখন বন্ধ। তাই বাস্তবেই এ দিনও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হল তাঁত শিল্পীদের।
বিষ্ণুপুরে তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানান, এই এলাকায় তাঁতিদের উৎপাদিত রেশম থান মূলত কলকাতা সহ শ্রীরামপুরে বিক্রি হয়। পুজোর বাজার সবেমাত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের আগে উৎপাদিত থান ব্যবসায়ীদের ঘরে মজুত থাকার জন্য পুরনো মজুত থান বিক্রি করতে হচ্ছে। এর ফলে নতুন করে রেশম থান আর বানানো হচ্ছে না। শিল্পীরাও কাজ পাচ্ছে না। বাজার মন্দা বলে শিল্পীদের কাজ দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
অথচ স্থানীয় শিল্পীরা জানান, দুর্গাপুজোর আগে তাঁরা খাওয়ার সময় পেতেন না। করোনা পরিস্থিতির আগে তাঁত শিল্পীদের ঘরে দু’জন শ্রমিক রেশম থান বোনার কাজে ব্যস্ত থাকতেন দিনভর। একদিনে সাড়ে ছ মিটার থান বুনতে পারলে ৩০০ টাকা মজুরি জুটত। মহাজনরাও প্রতি সপ্তাহে কম করে পাঁচ হাজার সিল্কের থান কলকাতার বাজারে নিয়ে যেতেন। আর এখন শ্রমিকদের অনেকেই কাজের অভাবে বসে আছেন। যে সমস্ত তাঁত শিল্পী কাজ করছেন তাঁরা সাড়ে ছ’মিটার থান বুনলে ২০০ টাকা পাচ্ছেন বলে জানান। ১১ মিটার রেশম থানের দাম হয়েছে দু’হাজার টাকা। করোনা পরিস্থিতির আগে সেটাই আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা ছিল।
তন্ময় দাস নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বর্তমানে সুতোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুরিও কমে গিয়েছে। আবার বাজার মন্দার ফলে থানের দামও কমে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে থান রেখেছিলেন। সেই মজুত থান বর্তমানে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা ক্ষতি করে বিক্রি করতে হচ্ছে।’’