ভোটের কয়েক মাস বাকি। কিন্তু, সদ্য প্রকাশ্যে আসা ওয়ার্ড ভিত্তিক সংরক্ষণ তালিকাকে কেন্দ্র করে এখনই আসন্ন পুর-নির্বাচনের আঁচ পেতে শুরু করেছে শহর দুবরাজপুর।
ওয়ার্ডভিত্তিক সংরক্ষণের যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে শাসকদলের অন্দরেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়েছে। সংরক্ষণের কোপে পড়া তৃণমূলের বর্তমান ও প্রাক্তন কাউন্সিলরদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশের আগে তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থও হতে পারেন। কয়েক জন কাউন্সিলর তো একান্ত আলোচনায় এমন অভিযোগও তুলছেন যে, পুরোটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাজকর্মের ভুল ধরতে পারেন বা মতের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন, বেছে বেছে এমন কয়েক জনের ওয়ার্ডকে সংরক্ষণের আওতায় রাখা হয়েছে বলে ওই বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের দাবি। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে।
খসড়া সংরক্ষণ তালিকা অনুয়ায়ী, প্রায় ৪০ হাজার জনসংখ্যার ১৬টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট দুবরাজপুর পুরসভার ২, ৪, ৬, ৭, ১০, ১২, ১৪ এবং ১৫— মোট ৯টি ওয়ার্ড সংরক্ষিত। এগুলির মধ্যে দু’টি তফসিলি সংরক্ষিত আসন ধরে মোট মহিলা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ৬টি। অতীতে একাধিক বার বিজেপি-র টিকিটে জিতে কাউন্সিলর হয়েছেন সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি। গত বার (২০১৩) পুরভোটের আগেই তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু তাঁর ১২ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি সংরক্ষিত হওয়ায় নির্বাচনে লড়তে পারেননি। এ বার ভেবেছিলেন লড়বেন। কিন্তু, এ বার সেই ওয়ার্ড তফসিলি সংরক্ষিত। সত্যপ্রকাশবাবুর দাবি, ‘‘কোন গণিত মেনে পরপর দু’বার সংরক্ষণের আওতায় একই ওয়ার্ড আসে, জানি না। সত্যিই ভীষণ হতাশ।’’ ক্ষুব্ধ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান তথা চার বারের কাউন্সিলর শেখ নাজিরউদ্দিনও (আগে কয়েক বার কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছেন)। এ বার তাঁর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত। নাজিরউদ্দিন বলছেন, ‘‘পুর-আইন অনুযায়ী যে ভাবে সংরক্ষণ হওয়ার কথা, তা হয়নি। আমি মোটেই সন্তুষ্ট নই। দলের জেলা সভাপতি কে জানিয়েছি। ওঁর কথা মতোই সিদ্ধান্ত নেব।’’
৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শাসকদলের টিকিট-প্রত্যাশী ছিলেন ভূতনাথ মণ্ডল। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি পুরপ্রধানের বিরোধী শিবিরের লোক হিসাবেই পরিচিত। খসড়া তালিকা অনুযায়ী ৬ ওয়ার্ডটিও তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত। ভূতনাথবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমার ওয়ার্ডে মাত্র ১৩.১৭ শতাংশ তফসিলি জাতির বাস। আরও ১০টি ওয়ার্ডে অনেক বেশি হারে তফসিলি জাতিভুক্ত মানুষ বাস করেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এ কাজ করা হয়েছে।’’ শুধু তাই নয়, দুবরাজপুরে জোর জল্পনা ছিল, বর্তমান উপ-পুরপ্রধান মির্জা সৌকত আলির ১১ নম্বর ওয়ার্ড সংরক্ষণের কোপে পড়তে পারে। যার জেরে ১০ নম্বর থেকে প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান নূর মহম্মদের সঙ্গে সৌকত আলির লড়াই হতে পারে। কিন্তু, ১০ নম্বর ওয়ার্ডটাই মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় হতাশ নূর মহম্মদ। তাঁর কথায়, ‘‘কোন নিয়মে হল বুঝিনি। মানুষও বিভ্রান্ত।’’
পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা একেবারেই খসড়া তালিকা, চূড়ান্ত নয়। তা ছাড়া যা হয়েছে, তা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ও নীতি অনুযায়ী। কী ভাবে সেটা হয়েছে বলতে পারব না।’’ তবে তিনি মানছেন, পরপর দু’বার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষণের কোপে পড়ার ঘটনাটি ব্যতিক্রম। পুরপ্রধান জানান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আগে সংরক্ষণের আওতায় কখনও আসেনি। তাই সেটা আসতেই পারে। ৬ নম্বর ওয়ার্ড সেই ’৯৮ সালে তফসিলি জাতি সংরক্ষিত ছিল। তার পরে এ বার হয়েছে। এখানে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই। পীযূষবাবুর সংযোজন, ‘‘আমার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, ভাই শুভ্র পাণ্ডের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, শহর সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের ৪ নম্বর ওয়ার্ডও সংরক্ষণের আওতায়। কী করা যাবে!’’ পুরপ্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এক বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরের দাবি, পুরপ্রধান ও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা যে অন্য ওয়ার্ড থেকে লড়বেন, তা আগেই স্থির। ফলে, তাঁদের আর চিন্তা কী?