মঞ্চে: সিউড়ি জেলা স্কুলের মাঠে সভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধির কার্যত তোয়াক্কা না-করেই হল বিজেপির মিছিল এবং রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের জনসভা। মানা হল না দূরত্ববিধিও। সিউড়িতে বীরভূম জেলা স্কুলের মাঠে সেই জনসভা থেকেই তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করলেন দিলীপ।
এই সভার পাল্টা হিসেবে আজ, বৃহস্পতিবার জেলার ছ’টি পুরসভা এলাকায় বড় মিছিল করতে চলেছে তৃণমূল। আজ, তিনি কিছু ‘বার্তা’ দিতে চান বলে রবিবার ইলামাবাজারের কর্মিসভায় জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ফলে, এই জেলায় বিজেপি-তৃণমূল দ্বৈরথ আরও বাড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার রাতে সিউড়ি পৌঁছে কড়িধ্যা মোড়ের কাছে একটি অনুষ্ঠান ভবনে রাত্রিবাস করেন মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ। এ দিন সকাল থেকেই জমসংযোগে নেমে পড়েন। প্রথমে সেচ দফতরের মাঠে প্রাতর্ভ্রমণ করতে করতে সেখানে আসা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরেই শহরের ১-এর পল্লি মোড়ের কাছে ‘চায়ে পে চর্চা’র আসরে যোগ দেন। সেখানে গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় শেখ দিলদার খুনের প্রসঙ্গ তুলে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘একটি মুসলিম ছেলে আমাদের মিছিলে এসেছিল। গুলি লাগল মারা গেল। এখানকার তৃণমূলের জেলা সভাপতি তাঁর বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বলাল যে তাঁর ছেলে তৃণমূল করে।’’ এর পরেই তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘‘আমি বলে যাচ্ছি বীরভূমের মানুষ এত সহজে তৃণমূলকে জিততে দেবে না।’’
এ দিন সভার আগে বিজেপি-র রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ-র নেতৃত্বে শ’তিনেক দলীয় কর্মীরা হাটজনবাজার ক্যানাল থেকে মোটরবাইক র্যালি করে সার্কিট হাউসের কাছে আসেন। অধিকাংশের মাথায় হেলমেট ছিল না।
মুখে ছিল না মাস্কও। সিউড়ির পুলিশ লাইন এবং সার্কিট হাউস থেকেও পরে দু’টি মিছিল করে বিজেপি। সেখানে বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। দুই মিছিল শেষ হয় জেলা স্কুল মাঠে। বেলা ১২ টা নাগাদ শুরু হয় জনসভা। সভায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার দশেক বিজেপি কর্মী এসেছিলেন।
সভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। নিজের বক্তৃতায় সংখ্যালঘুদের প্রতি বারবার বার্তা দিয়েছেন দিলীপ। বলেছেন, ‘‘আমি বলছি বিজেপি ক্ষমতায় এলে আপনারা সব থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকবেন, সম্মানের সঙ্গে থাকবেন। যান ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে দেখে আসুন।’’
তাঁর দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমেরা সব থেকে বেশি নিপীড়িত। আমি বলে যাচ্ছি বিজেপির প্রেসিডেন্ট পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কোনও মুসলিমকে কেউ চোখ দেখাতে পারবে না।’’
এ দিন বিজেপির সংখ্যালঘুর মোর্চার নেতা শেখ সামাদের মেয়েকে মঞ্চে ডেকে নেন রাজ্য সভাপতি। তাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেন। পাড়ুই অঞ্চলের দাপুটে নেতা শেখ সামাদ দীর্ঘদিন ধরে জেলবন্দি। তৃণমূল ও পুলিশ মিথ্যা মামলায় সামাদকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপি-র। গত রবিবার মাড়গ্রামের বিজেপি নেতা রেজাউল ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর এবং মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই রেজাউলকেও এ দিন মঞ্চে সংবর্ধনা জানানো হয়। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এ দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন।
এ দিনের বক্তৃতায় রাজ্যের শাসকদল এবং পুলিশের প্রতি আগাগোড়া আক্রমণাত্মক ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে মানুষ যাকে ইচ্ছা ভোট দেবেন। তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে আমরা ভোটকেন্দ্রের কাছে থাকতে দেব না। বুথ থেকে ১০০ মিটার দূরে গাছের তলায় চেয়ার নিয়ে বসে বসে পুলিশ চা-সিঙ্গাড়া খাবে।’’
একই সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সতর্ক করে তাঁর বার্তা, ‘‘যদি পরিবর্তন না-হয়, তাহলে মে মাসের পরে নিজের গ্রামে থাকতে পারবেন না। নিজের বাড়ির ভাত খেতে পারবেন না। পাশে ঝাড়খণ্ডে জায়গা খুঁজে রাখুন, বাড়ি করে রাখুন। কারণ এখানে থাকার জায়গা হবে না।’’