মাস তিনেক আগে বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন, ‘‘দুবরাজপুরে বাইপাস হবে। জমি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। হলে আমরা দেখব।’’ সোমবার সেই ‘ফোর লেন বাইপাস’ নিয়ে একটি চূড়ান্ত বৈঠক হয়ে গেল সিউড়ির ডিআরডিসি হলে। শুধু দুবরাজপুরের বাইপাসই নয়, জাতীয় সড়কের আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপ রেখা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে ছিলেন, জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে দু’জন এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ ও পার্থসারথি দে, জেলার দুই সংসদের প্রতিনিধি, বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি, দুবরাজপুর পুরসভার পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে এবং যে যে রাস্তায় কাজ হবে সংশ্লিষ্ট সব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। এ দিন চূড়ান্ত নকশা নিয়ে কারও কোনও মতামত বা আপত্তি আছে কি না তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা
হয়েছে। জানিয়েছে প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
ঠিক হয়েছে, জাতীয় সড়ক ১১৪ এ রামপুরহাট মনসুবা মোড় থেকে ঝড়খণ্ড বর্ডার শুঁড়িচুয়া পর্যন্ত রাস্তাটি দুটি লেনে সম্প্রসারণ করা হবে। জাতীয় সড়ক টুবি-র অধীনে থাকা রাস্তার, বর্ধমান বর্ডার থেকে বোলপুর শিবতলা মোড় পর্যন্ত চার কিমি রাস্তা সম্প্রসারণ করা হবে। তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় কাজটি হচ্ছে বোলপুরের শিবতলা মোড় থেকে মাল্লারপুর পর্যন্ত ৫৭ কিমি রাস্তার সম্প্রসারণ। এবং চার নম্বরে রয়েছে দুবরাজপুর শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ককে শহরের বাইরে দিয়ে নিয়ে যাওয়া বা ‘ফোর লেন বাইপাস।’
ঘটনা হল, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও দুবরাজপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জনবহুল শহরের মধ্যে দিয়ে এই রাস্তা এখন যথেষ্টই সঙ্গীন।
দিন রাত যানজট লেগেই থাকে। খুবই প্রয়োজন ছিল রাস্তাটি চওড়া করার। কিন্তু চার লেনে চওড়া করতে গেলে অসংখ্য বাড়ি ভাঙা পড়বে শহরের। দুবরাজপুর শহরের আগেই হিমঘরের কাছে ডানদিকে নেমে যাচ্ছে বাইপাস। তারপরে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালের পাশ দিয়ে সোজা ৪.৮ কিমি দূরে সাতকেন্দুরী মোড়ের কাছে উঠছে একটি বাইকের শোরুমের কাছে। মোট ৯৫ একর জমির অধিগ্রহণ প্রয়োজন। নির্মাণভাঙা পড়বে ৭৬টি। পুরপ্রধান পীযূষবাবু বলেন, ‘‘কোনও সমস্যা হবে না জমি পেতে।’’
বোলপুরের শিবতলা মোড় থেকে মাল্লারপুর পর্যন্ত ৫৭ কিমি রাস্তার সম্প্রসারণ নিয়ে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘বোলপুর, পুরন্দরপুর, রঙ্গাইপুরপুর মোড় সাঁইথিয়া হয়ে মল্লারপুর। এই রাস্তটি বর্তমানে জাতীয় সড়ক টুবি-র তকমা পেলেও এখনও পূর্ত সড়ক বিভাগের হাতেই রয়েছে।’’ জাতীয় সড়ক ১২ ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিশিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘দুই লেনের ঝকঝকে রাস্তা, সাতটি বাইপাস ও দুটি রোড ওভারব্রিজ-সহ রাস্তাটিকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত। ঠিক হয়েছে, যেখানে যেখানে বাইপাস চওড়া হবে, জমি নিতে হবে। সেটা চওড়া হয়ে ৬০ মিটার হবে। তবে জমি পেতে কোনও
সমস্যা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সব পক্ষই।’’
দুবরাজপুর বাইপাস বার্ধমান বর্ডার থেকে বোলপুর শিবতলা পর্যন্ত প্রকল্পের অনুমোদন হয়েই আছে। বাকি দুটি প্রকল্পের অনুমোদন করানোর জন্যই ছিল এ দিনের বৈঠক। প্রশাসন মনে করছে, সামনের বছরেই কাজ শুরু হবে। জাতীয় সড়ক ও প্রশাসন সূত্রে দাবি, রামপুরহাট থেকে দুমকা পর্যন্ত ১৫কিমি রাস্তার ক্ষেত্রেও জমি নিয়ে বিশেষ সমস্যা হবে না। দুটি গ্রামকে এড়িয়ে বাইপাস এবং একটি রোড ওভারব্রীজ হচ্ছে ওই রাস্তায়। নিশিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘মূল কথা হল, একটি জাতীয় সড়ক দিয়ে ১০০ কিমি গতিতে গাড়ি ছুটবে। সেটা যাতে সম্ভব হয় তার জন্য যা করণীয় করা হবে।’’
সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘উল্লেখযোগ্য প্রকল্প জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও অনেক উন্নত হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’’