ঝুঁকি: ময়ূরেশ্বরের কুমিরতাড়া গ্রামে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
গোসাপ ধরতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা রোখা যাচ্ছে না কিছুতেই। ফি বর্ষায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এমন মৃত্যুর ঘটনা প্রশাসনের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, মৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশই আদিবাসী। প্রবীণ থেকে বালক— সকলেই আছেন তালিকায়।
সম্প্রতি গ্রাম লাগোয়া মাঠে গোসাপ ধরতে গিয়ে ময়ূরেশ্বরের মহিষা আদিবাসী পাড়ার স্বপন মাড্ডি নামে বছর একুশের এক যুবকের মৃত্যু হয়। গত বছর একই ভাবে সেচখালে গোসাপ ধরতে গিয়ে লাভপুরের গোপালপুর মাঝিপাড়ায় হোপন হাঁসদা নামে বছর বারোর এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এমন উদাহরণ রয়েছে আরও।
বছরের অন্য সময় গোসাপ সাধারণত মাঠের আল কিংবা মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে। মাটির গর্ত খুঁড়ে তাদের বের করা শ্রমসাধ্য বলে ওই সময় সাধারণত গোসাপ নিরাপদে থাকে। বর্ষার মরসুমে চাষিরা আল কেটে পরিষ্কার করেন। অন্য দিকে, মাটির গর্তে জল ঢুকে যায়। তাই বিকল্প আশ্রয়ের খোঁজে গোসাপরা কখনও মাঠে ছোটাছুটি শুরু করে। কখনও কাঁদর কিংবা সেচখালের জলে শরীর ডুবিয়ে মাথাটুকু বের করে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় গোসাপ-শিকারীরা।
গোসাপ শিকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, শিকারে ঝুঁকির কথা। জলে ঝাঁপ মেরে লুকিয়ে থাকা গোসাপ ধরতে গিয়ে সাপের ছোবল খেতে হয়। আবার কখনও তাড়া খেয়ে গর্তে লুকিয়ে পড়া গোসাপকে বের করতে গিয়েও একই ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাপের কামড়কে গোসাপের ভেবে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার পরিবর্তে উপেক্ষা করেন শিকারীরা। ফলে দিনের শেষে দেখা যায়, মাঠেই পড়ে থাকে তাঁদের দেহ।
ময়ূরেশ্বরের কুমিরতাড়া গ্রাম লাগোয়া মাঠ এবং সেচ খালে গোসাপ ধরতে দেখা গেল স্থানীয় চার আদিবাসী বালককে। ওই বালকরা জানায়, স্কুল ছুটির পরে প্রতিদিনই চার-পাঁচটি করে গোসাপ ধরে নিয়ে যায়। বাড়িতে রান্নাও হয়। বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতার আহ্বায়ক সুনীল সোরেন বলেন, ‘‘সচেতনতার অভাব এবং আদিবাসী সমাজের প্রচলিত খাদ্যাভাসের জন্যই অভিভাবকরাও ছোটদের গোসাপ শিকারে প্রশ্রয় দিয়ে বিপদ ডেকে আনেন।’’ সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা অন্য কুসংস্কার দূর করার পাশাপাশি এ ব্যাপারে আদিবাসীদের সচেতন করা চেষ্টা করছেন তাঁরা।
একই বক্তব্য কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণ দুর্নীতি দমন শাখার জেলা সদস্য দীনবন্ধু বিশ্বাসেরও। তিনি বলেন, ‘‘ও ভাবে গোসাপ শিকার শুধু বিপজ্জনকই নয়। আইন বিরুদ্ধও। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চালানো হয়। প্রয়োজন প্রশাসনিক উদ্যোগও।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সত্যিই বিষয়টি উদ্বেগজনক। সচেতনতার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, আদিবাসী সংগঠন সবাইকে সামিল করা হবে।’’