সাগর থেকে ফিরল দেহ

দেহ আসার খবর চাউর হতেই, সকাল থেকেই গোটা পাড়া ভেঙে পড়েছিল ভট্টাচার্য বাড়ির উঠোনে! শারদীয় উৎসবের রোশনাই, রবিবারের ছুটির আমেজ— মুহূর্তে সব যেন কেমন ফিকে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

রবীন্দ্রপল্লিতে বিশ্বজিতের বাড়িতে। দেহ ঘিরে মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দেহ আসার খবর চাউর হতেই, সকাল থেকেই গোটা পাড়া ভেঙে পড়েছিল ভট্টাচার্য বাড়ির উঠোনে!

Advertisement

শারদীয় উৎসবের রোশনাই, রবিবারের ছুটির আমেজ— মুহূর্তে সব যেন কেমন ফিকে!

বন্ধু, পরিজন, চেনামুখের থমথমে ভিড়। ভিতর থেকে কান্নার রোল ভেসে আসছিল। ভিতরে যে দেহ শোয়ানো। মাথার কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। পাশেই কাঁদছেন বাবা-ভাই! নিচু গলায় কেউ বলছিলেন, ‘‘কী করে যে কী হয়ে গেল!’’ কেউ বলছিলেন, ‘‘এই তো পুজোতে দেখেছি। ছেলেটা নেই!’’ — এখনও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কেউ-ই! এই তো কাকার সঙ্গে পুরী বেড়াতে গিয়েছিল! সমুদ্র গিয়ে অতলে তলিয়ে যাওয়া। কেই-বা জানত, সমুদ্রে থেকে নিথর দেহ ফিরবে তাঁর!

Advertisement

শোকের ছায়া রবীন্দ্রপ্ললিতে, বিশ্বজিতের সারা বাড়ি জুড়ে!

পুরীতে তোলা বিশ্বজিতের নিজস্বী

১১ তারিখ কাকা লালু ভট্টাচার্যের পরিবার-সহ নয় জনের একটি দলের সঙ্গে পুরী বেড়াতে গিয়েছিলেন আট নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা বিশ্বজিৎ। পুরী পৌঁছে ফেসবুকে সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে ছবিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। শনিবার দাদার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ভাই ইন্দ্রজিৎ জানিয়েছিল, ‘‘সব কেমন হয়ে গেল! এই তো গেল বেড়াতে। কতো আনন্দ করছিল। সব শেষ! দাদা নেই, এটা ভাবতেই পারছি না!’’ তাঁর পরিবার সূত্রে দাবি, শনিবারই দুপুরে বিশ্বজিতের তলিয়ে যাওয়ার খবর পৌঁছয় পরিবারের কাছে। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ভাইপোর নিথর দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে কাকা লালুবাবু বলেন, ‘‘পুজো দিয়ে হোটেলে আমরা সবে গিয়েছি। বেলা বারোটা নাগাদ বোনের সঙ্গে বিশ্বজিৎ সমুদ্রে যায়। চোখে বালি ঢুকে পড়ার কারণে মেয়ে জল থেকে সামান্য দূরে ছিল। হঠাৎ আমার মেয়ে ভ্রমর ফোন করে বলে, ‘দাদাকে বড় ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!’’’

সমুদ্রতীর থেকেই এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে হোটেলে ফোন করে বিশ্বজিতের তলিয়ে যাওয়ার খবর দেয় লালুবাবুর মেয়ে ভ্রমর। এরপরেই তাঁরা সকলে ছুটে যান সমুদ্রতীরে। সহায়তাকারীদের এবং পুলিশের সহায়তা নেন। ঘণ্টা দুয়েক পরে, দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানান লালুবাবু। ছেলের তলিয়ে যাওয়ার খবরে শোক নামে শনিবারই। রাতেই খবর যায় পরিজনদের কাছে। ও দিকে দেহ উদ্ধারের পরে ময়নাতদন্ত হয়। এবং রাতেই বোলপুরের পথে দেহ নিয়ে রওনা হন লালুবাবু। এ দিন বিশ্বজিতের বাবা তপন ভট্টাচার্য কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘বড় ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম! কী বলব?’’

এক পড়শি এ দিন জানান, সবে বাবা অবসর নিয়েছে। ছেলে চলে গেল! পড়াতে বাস ছিল বিশ্বজিৎ। বাবার সব দায়িত্ব ওঁরই কাঁধে আসার কথা। কিন্তু তার আগেই সব শেষ! আরেক পড়শির কথায়, ‘‘এই শোক কি কাটিয়ে ওঠার, বুকে তো পাথর পড়েছে। গোটা বাড়িটার দিকে কালকের পর থেকে আর তাকানো যাচ্ছে না।’’ বোলপুরের রবীন্দ্রপল্লি বাড়ি থেকেই এ দিন দেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় সতীঘাট শ্মশানে। সেখানেই তাঁর শেষ কৃত্য হয়েছে।

বিশ্বজিতের পরিবার সূত্রের খবর, রসায়ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ বিশ্বজিৎ গৃহ শিক্ষকতা করতেন। চলতি মাসের ১৯ তারিখে অণ্ডালের একটি বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এ দিন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর শেখ এবং পাড়া-পড়শিরা হাজির ছিলেন তাঁর শেষযাত্রায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement