পড়ে রয়েছে দেহ। ছবি: শুভ্র মিত্র
এক হস্তিশাবকের মৃত্যু হল বাঁকুড়ায়। মঙ্গলবার সকালে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের রাধানগর রেঞ্জের অন্তর্গত বলরামপুর বিট-এর নোনাশোল গ্রামের কাছে একটি পুকুরের পাশে মাস ছয়েকের ওই পুরুষ হাতিটির দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়েরা। তাঁরা খবর পাঠান পুলিশ ও বন দফতরে। ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মী ও বন আধিকারিকেরা।
বন আধিকারিকদের ধারণা, অসুস্থ ছিল শাবকটি। এ দিনই তার দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।
ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগ) কল্যাণ রাই বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই মনে হচ্ছে। অনেক সময় বাচ্চা দুর্বল হয়েই জন্মায়। হতে পারে শীতকালে জন্মেছিল শাবকটি। গ্রীষ্মের তাপ সহ্য করতে পারেনি। তবে, ময়না-তদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’’
রাধানগর বনবিভাগের রেঞ্জার টুটু বাওয়ালি জানান, মৃত পুরুষ হস্তিশাবকটির বয়স ছ’মাস। স্থানীয়দের একাংশ মনে করছেন, জল না পেয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তাপমাত্রা চড়তেই জঙ্গল লাগোয়া জলাশয়গুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। জলের অভাব তৈরি হয়েছে। যদিও, তা মানতে নারাজ বন দফতর।
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে ৪০টি হাতির একটি বড় দল বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগ ছেড়ে পশ্চিম মেদিনীপুর অভিমুখে যাচ্ছিল। তাদের পিছু নিয়েছিল ১৮টি হাতির একটি দল। ওই দলেই ছিল শাবকটি। মঙ্গলবার দুপুরের খবর, হাতির ছোট দলটি সোনামুখী রেঞ্জ-এর বড়নারায়ণপুর, তেতুলবাঁধ, রানিবাঁধ, ভুলা গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় ছিল। জঙ্গলঘেরা ওই সব গ্রামের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে মাইকে প্রচার চল দিনভর। জঙ্গলে ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে তাঁদের।
বছরের এই সময় নোনাশোল, বলরামপুর, বৈষ্ণনবাঁধ, কড়াশুলি, পাথরা গ্রামের অনেক বাসিন্দা মোল সংগ্রহে জঙ্গলে যান। বন দফতরের পরামর্শ উড়িয়ে হাতির ভয় উপেক্ষা করেই পেটের টানে ভোরে জঙ্গলে ঢুকছেন বহু মানুষ।
নোনাশোল-ভাটপুকুর বনসুরক্ষা কমিটির সদস্য শ্যামল চৌধুরী, দোলন চৌধুরী, জিতু লোহাররা বলেন, ‘‘হাতির দলটি শীতের আগে এই পথ ধরেই গিয়েছিল। দলে ছিল শাবকটি। ফেরার পথে প্রাণ গেল তার। ভাল লাগছে না।’’ স্থানীয়দের একাংশ জানান, শাবকটি অসুস্থ ছিল। তার মা তাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল। এ খবর স্থানীয় বলরামপুর ‘বিট’ কার্যালয়ে সোমবারই জানানো হয়েছিল। সময় মতো চিকিৎসা হলে হয়তো বেঁচে যেত শাবকটি। যদিও ডিএফও-র দাবি, ‘‘এমন কোনও খবর আমাদের কাছে ছিল না।’’
নোনাশোল, ভাটপুকুর গ্রামের অনেক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, গরম পড়তেই জঙ্গলের জলাশয়গুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। তাঁদের দাবি, দ্রুত জলাশয়গুলির সংস্কারে উদ্যোগী হোক বন দফতর। ডিএফও অবশ্য বলেন, ‘‘জঙ্গল এলাকায় জলের অভাব নেই।’’
এ নিয়ে এক মাসের ব্যবধানে বাঁকুড়ায় তিনটি হাতির মৃত্যু হল। গত মাসের প্রথম দিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেলিয়াতোড় রেঞ্জ-এর জঙ্গল লাগোয়ে চুয়াগাড়া ও পিতরাগাড়া গ্রামে দু’টি হাতির মৃত্যু হয়েছিল।