পরাজয়ে দ্বন্দ্বকে দুষছে তৃণমূল

বোরোর সমবায়ে আবার সিপিএম

ঝাড়গ্রাম, তালড্যাংরার পরে পুরুলিয়ার বোরো। সমবায় সমিতিতে ফের হারতে হল তৃণমূলকে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম ও তালড্যাংরায় আদিবাসীদের জন্য সমবায় সমিতি বা ল্যাম্পস-এর পরিচালন সমিতির নির্বাচনে বিরোধীদের কাছে পর্যদুস্ত হয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

সমীর দত্ত

বোরো শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৮
Share:

ঝাড়গ্রাম, তালড্যাংরার পরে পুরুলিয়ার বোরো। সমবায় সমিতিতে ফের হারতে হল তৃণমূলকে।

Advertisement

সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম ও তালড্যাংরায় আদিবাসীদের জন্য সমবায় সমিতি বা ল্যাম্পস-এর পরিচালন সমিতির নির্বাচনে বিরোধীদের কাছে পর্যদুস্ত হয়েছে তৃণমূল। এ বার জঙ্গলমহলের বোরো থানার আঁকরো বড়কদম সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়ে সিপিএম তাদের ক্ষমতা ধরে রেখেছে। রবিবার হওয়া ওই নির্বাচনে দু’তরফে লড়াই অবশ্য হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। এই সমিতির ৬৭টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৩৫টি পেয়েছে। তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে ৩২টি। তৃণমূলের মানবাজার ২ ব্লক সভাপতি প্রভাস মণ্ডল নিজেও সমিতির প্রার্থী ছিলেন। শাসকদলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তিনিও জিততে পারেননি। এমনকী, তাঁর এলাকার ১৩টি আসনের মধ্যে একটিও তৃণমূল পায়নি! এবং এই হারের পিছনে দলীয় দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন জেলা তৃণমূলের একাংশই। এমনকী, হারের কারণ নিয়ে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে দুই গোষ্ঠীতে।

এই সমবায় সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৬৬৩ জন। প্রার্থী ছিলেন ১৫৮ জন। রবিবার ১৪২১ জন ভোট দিয়েছেন। গণনা শেষ করে ফল জানাতে রাত হয়ে যায়। ৬টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়েছিল। আঁকরো উত্তর ও আঁকরো দক্ষিণ কেন্দ্রের ভোট আঁকরো হাইস্কুলে ও প্রাথমিক স্কুলে নেওয়া হয়েছে। আগুইবিল, নেকড়া, জয়পুর, ও বড়কদম গ্রামের ভোটও হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা কমিটির সদস্য, মানবাজার ২ ব্লকের বেলডি গ্রামের বাসিন্দা শ্রীপতি মাহাতো অবশ্য একে হার বলে স্বীকার করেন না। তাঁর দাবি, ‘‘জঙ্গলমহলের বেশির ভাগ সমবায় সমিতি সিপিএমের তৈরি। প্রায় সমস্ত সদস্য সিপিএমের। আগে তো সিপিএম সমবায় সমিতিগুলির নির্বাচন করত না। তাদের মনোনীত লোকেরাই সদস্য হতেন। এই সমিতিও বরাবর সিপিএমের দখলে ছিল। আমরা এখানে শূন্য থেকে শুরু করেছি। ৩২টি আসন পাওয়া কম কথা নয়।’’

এখন সিপিএমের সেই সংগঠন কোথায়? শ্রীপতিবাবুর স্বীকারোক্তি, ‘‘মানছি, সিপিএম এখানে তেমন ক্ষমতাশালী নয়। আসলে, আমাদের দলের কোন্দলের জন্যই সিপিএম প্রার্থীরা জিতেছে।’’ দলীয় মতানৈক্যের কথা স্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সীতারাম মুর্মু-ও। তিনি আবার সরাসরি ব্লক সভাপতির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রভাসবাবুর জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। তবু তাঁকেই সভাপতি পদে রাখা হয়েছে। সমবায় সমিতির নির্বাচন নিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে একবারও বৈঠকে বসেননি। আমরা নিজেদের মতো করে আমাদের এলাকায় প্রচার চালিয়েছিলাম বলে আগুইবিল, জয়পুরের মতো জায়গায় ভাল ফল হয়েছে। অথচ উনি নিজের গ্রামে একটি আসনও জেতাতে পারেননি দলকে।’’

ঘটনা হল, এই সমবায়টি যে গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায়, সেই আঁকরো-বড়কদম পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে। মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের। মানবাজার ২ ব্লক বান্দোয়ান বিধানসভার অন্তর্গত হওয়ায় বিধায়ক অবশ্য সিপিএমের। এই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান পদে আগে ছিলেন ব্লক সভাপতিরই পুত্রবধূ। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই প্রধান হওয়ার দেড় বছরের মাথায় তাঁকে অপসারিত করে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সদস্য প্রধান হন। প্রভাস মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এ কারণে নিজে তেমন প্রচারে বেরোতে পারিনি।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ডেকে পাঠালেও দূরের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এখানে আমি দলটাকে আগলে রেখেছি। দল এখন ক্ষমতায়, তাই সবাই নেতা সাজতে চান।’’

শ্রীপতিবাবুর মতো তিনিও মেনে নিয়েছেন, সিপিএমের এখন সাংঠনিক ক্ষমতা তেমন নেই। নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই সিপিএম প্রার্থীরা জিতেছেন। জেলাস্তরের নেতাদের একাংশের মদতে এখানে দলীয় দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। তৃণমূলের জেলা নেতা নবেন্দু মাহালি বলেছেন, ‘‘ওখানে স্থানীয় নেতাদের মতানৈক্যের কারণে সমবায় নির্বাচনে এমন ফল হয়েছে। জেলা স্তরের কোনও নেতার ভূমিকা সম্পর্কে অভিযোগ থাকলে এবং তা জেলা দলীয় কার্যালয়ে এসে জানালে দল ব্যবস্থা নেবে। এ ধরনের ফল কেন হল, স্থানীয় নেতাদের কাছে তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চাইব।’’

সিপিএমের জোনাল (মানবাজার ২) কমিটির সম্পাদক সুধাংশু মাঝি অবশ্য কেবলমাত্র তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কারণে তাঁরা জিতেছেন বলে মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের প্রতি মানুষের মোহ কেটে গেছে। এই সরকার কেবল প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু, পালন করে না। আমরা সব সময় মানুষের পাশে আছি, তাই সমবায় নির্বাচনে এই ফল হয়েছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ওই দলের কে যে নেতা, তার ঠিক নেই। মানুষ কাকে ভরসা করবেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement