চোট: অজিত রায়। নিজস্ব চিত্র
মনোনয়ন ঘিরে এ বার তেতে উঠল সোনামুখী, ছাতনা। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা করতে আসার পথে সোনামুখীতে সিপিএম কর্মীদের রাস্তা আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। প্রতিবাদ জানাতে গেলে সিপিএমের সোনামুখীর বিধায়ক অজিত রায়ের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে সোনামুখীতে এ দিন মনোনয়ন জমা দেননি সিপিএমের কর্মীরা। তাঁরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। হামলার অভিযোগ দায়ের করেন বিধায়ক। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা রুজু করা হয়েছে।’’ যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দল সূত্রে খবর, এ দিন সোনামুখীর ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার সিপিএমের মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করতে দল বেঁধে ব্লক অফিসে আসছিলেন। সঙ্গে ছিলেন দলের বহু কর্মী ও সমর্থকেরা। সোনামুখী-বাঁকুড়া রাস্তায় রপটগঞ্জে একটি পেট্রল পাম্পের সামনে পুলিশ তল্লাশির নাম করে তাঁদের গাড়ি আটকে দেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে সেখানে যান অজিতবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ঘটনাস্থলে পৌঁছন মাত্রই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বন্দুক, রড ও বাঁশ নিয়ে আমার উপর চড়াও হয়। আমি প্রাণ বাঁচাতে পুলিশের গাড়ির ভিতরে আশ্রয় নিতে যাই। কিন্তু রক্ষা পাইনি। সেখান থেকে টেনে নামিয়ে মারধর করা হয়। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে দেহরক্ষীও মার খায়। দলের লোকেরা ছুটে আসায় দুষ্কৃতীরা পালায়।’’ তিনি হামলার ঘটনায় রামপুরের গুঁইরাম সিংহ নামে এক তৃণমূল কর্মীর নাম উল্লেখ করে থানায় পরে অভিযোগ দায়ের করেন।
খবর পেয়ে সোনামুখীতে সিপিএমের আরও লোকজন জড়ো হন। দলের পতাকা নিয়েই থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্মীরা। ঘণ্টা খানেক বিক্ষোভ চলার পরে এসডিপিও সোনামুখী থানায় পৌঁছন। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেওয়ার পরে বিক্ষোভ ওঠে।
অভিযুক্ত গুঁইরামবাবু অবশ্য ফোনে দাবি করেন, ‘‘বিধায়ক মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি সেখানে ছিলামই না।’’ বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের কার্যকারী সভাপতি তথা সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সোনামুখীতে সিপিএমের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমাদের কিছু ভুল বোঝাবুঝিতে অজিতবাবু বিধায়ক হয়ে গিয়েছেন। এখন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওরা মারধরের নাটক করছে।’’
অজিতবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘তিন দিন ধরে পাত্রসায়র, ইন্দাস থেকে লেঠেল নিয়ে এসে সোনামুখী ব্লক অফিসের পাশে পিকনিক করে, পুলিশের উপস্থিতিতে বিডিও অফিসের সামনে লোকজনকে তল্লাশি করতে তৃণমূলের লোকেরা। এটা গণতন্ত্রের উৎসব?’’
বিডিও (সোনামুখী) রিজওয়ান আহমেদ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কোনও গণ্ডগোল নেই। সাধারণ মানুষও হেনস্তার অভিযোগ করেননি।’’ যদিও এ দিন সোনামুখী ব্লক অফিসে কোনও মনোনয়ন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি জমা পড়েনি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
অন্য দিকে, এ দিন ছাতনা ব্লক অফিসের সামনের রাস্তা তৃণমূল আশ্রিত কয়েকশো দুষ্কৃতী ঘিরে রাখে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি ও বামফ্রন্ট্রের প্রার্থীরা। বিজেপি-র ছাতনা মণ্ডল সভাপতি অশোক বিদের দাবি, এ দিন ছাতনার পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রায় ১৫০ জন প্রার্থীকে নিয়ে তাঁরা ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা করতে যান। সেখানে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা লাঠি, রড নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমাদের প্রার্থী কমল নায়ার ও অবন্তী রায়কে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। তাঁদের ছাতনা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অন্তত ১০ জন বিজেপি প্রার্থী ও কর্মী তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেয়ে জখম হয়েছেন।’’
বামফ্রন্টের দাবি, শুশুনিয়া এলাকায় মনোনয়ন জমা করতে আসা তাঁদের প্রার্থীদের গাড়ি আটকে তৃণমূলের লোকেরা মারধর করে। ছাতনার অন্য এলাকার বাম-প্রার্থীরা ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা করতে গেলে, সেখানে তাঁদের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ।
এ ছাড়া গঙ্গাজলঘাটি, শালতোড়া, ইঁদপুরেও বামপ্রার্থীদের মনোনয়ন জমা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলা সিপিএম সম্পাদক অজিত পতি। তিনি বলেন, ‘‘রানিবাঁধে আমাদের প্রার্থীরা জমা করতে গেলে পুলিশ দীর্ঘক্ষণ তাঁদের আটকে রাখে। শেষে কয়েকজন প্রার্থী ব্লক অফিসে ঢুকতে পারলেও, সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা মনোনয়ন জমা করতে পারেননি।’’ তিনি জানান, তৃণমূল যতই আটকাক, শেষ দিন পর্যন্ত তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খানের দাবি, ‘‘আমাদের দলের কর্মীরা সংযত রয়েছেন। কোথাও কোনও গোলমাল হচ্ছে না। বিরোধীরা নাটক করছে।’’