বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতার জন্য লাইন। মঙ্গলবার পুরুলিয়ায়।—নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বসে আবেদনকারীদের বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতার ফর্ম পূরণ করার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়া পুরসভার কর্মীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার পুরুলিয়া পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তেলকলপাড়ার ওই ঘটনায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে। সিপিএম এই মর্মে লিখিত অভিযোগও করেছে প্রশাসনের কাছে।
সিপিএমের পুরুলিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক কৌশিক মজুমদারের অভিযোগ, পুরুলিয়া পুরসভার পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতার ফর্ম দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “সরকারি কাজ একটি রাজনৈতিক দলের অফিস থেকে হচ্ছে। এর প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছি।” এ দিন একটু বেলার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার পাশে একটি ঘরের সামনে মহিলাদের লাইন। বাইরে লাগোয়া ঘরের দেওয়ালের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের পতাকা লাগানো। ভিতরে পুরসভার কর্মীরা কাজ করছেন। লাইনে দাঁড়ানো মহিলাদের বেশ কয়েক জন জানালেন, তাঁদের তৃণমূলের অফিসে আসতে বলা হয়েছিল।
কেন শাসকদলের কার্যালয় হিসেবে চিহ্নিত একটি ঘরে সরকারি প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে, জানতে চাওয়ার পুরসভার কর্মীরা প্রথমে মন্তব্য করতে চাননি। পরে এক পুরকর্মী বলেন, “এটি আগে সেলাইয়ের দোকান ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ। এলাকার মানুষ এখানেই ফর্ম ভরার কাজ করতে বললেন। তাই এখানে কাজ করছিলাম। তবে দুপুরের পর ওই ঘর থেকে আমরা অন্য জায়গায় কাজ সরিয়ে নিয়েছি।” এলাকার তৃণমূল কর্মীদেরও দাবি, ওই ঘরটি তাঁদের দলীয় কার্যালয় নয়, একটি ফাঁকা ঘর। স্থানীয় মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই পুরকর্মীরা এখানে কাজ করছিলেন। আর তাঁরা সাহায্য করছিলেন। এক তৃণমূল কর্মী বললেন, “ঘরের বাইরের দেওয়ালে দলীয় পতাকা থাকা মানেই তো সংশ্লিষ্ট ঘর দলীয় কার্যালয় নয়!”
কৌশিকবাবু বলেন, “আমরা প্রথমে মহকুমাশাসককে (সদর) ফোনে এই বিধিভঙ্গের ঘটনার কথা জানাই। পরে তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের বিভাস দাসও বলেন, “তেলকলপাড়ায় তৃণমূলের দলীয় কাযার্লয়ে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার ফর্ম পূরণ সংক্রান্ত কাজ চলছিল। আমরা পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসারের কাছে অভিযোগ করি। তিনি খোঁজ নিয়ে আমাকে জানান, দুপুর অবধি যে ঘরে ফর্ম পূরণ সংক্রান্ত কাজ চলছিল, সেই ঘর থেকে সরিয়ে পরে অন্য জায়গায় কাজ হয়েছে।” যদিও পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার দিলীপ পাল জানান, এ রকম কোনও খবর তাঁর কাছে নেই। প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, মহকুমাশাসক সৌম্যজিত দেবনাথ অভিযোগ পাওয়ার পরেই দিলীপবাবুকে বিষয়টি দেখতে বলেন। যদিও ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি মহকুমাশাসক। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার কাছে এই মর্মে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। তবে, এ দিন বার্ধক্য ভাতা বা বিধবা ভাতার কোনও ফর্ম পূরণ করা হচ্ছিল না। যে-সব আবেদনকারী ফর্ম পূরণ করেছেন, তাঁদের ফর্ম পরীক্ষা করার কাজ হচ্ছিল। আমি খবর পাবার পরেই কর্মীদের অন্য জায়গায় কাজ করতে বলেছি।”
তবে, শুধুই শাসক দল নয়, শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সৌরীন চট্টরাজের বিরুদ্ধেও তাঁর বাড়ি থেকে বার্ধক্য ভাতা বা বিধবা ভাতার ফর্ম পূরণের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। মোবাইল বন্ধ থাকায় এ দিন সৌরীনবাবুর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কৌশিকবাবু বলেন, “এই অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। তবে, তিনি ওই এলাকার কাউন্সিলর। এবং তাঁর বাড়িতেই ওয়ার্ডের অফিস। তাই তিনি নিজের বাড়ি থেকে ফর্ম পূরণ করার কাজ করে থাকতে পারেন। তবে, তাঁকে আমরা বলেছি, বাড়ির বদলে এলাকার কোনও স্কুল, ক্লাবঘর, মন্দির বা ওই রকম জায়গা থেকে কাজ করতে।”